img


কদমতলায় এখনো উত্তেজনা


নিজস্ব প্রতিনিধি:- দুর্গা পূজার চাঁদা নিয়ে জুলুমবাজি এবং এই ঘটনাকে ঘিরে এখনো অগ্নিগর্ভ উত্তর ত্রিপুরার কদমতলা এলাকা। পরিস্থিতি  স্বাভাবিক করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ জারি রয়েছে। তবে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যেকোনো সাম্প্রদায়িক উস্কানি হলে, যে কোন মুহূর্তে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা লেগে যাবার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে বলে খবর।এজন্য সতর্ক রয়েছে প্রশাসন, পরিস্থিতি সামলাতে নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া টহলদারি চলছে গোটা কদমতলা এলাকার। যদিও পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত। ঘটনার সূত্রপাত রবিবার দুপুরে। বহিঃরাজ্যে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার সময় সংখ্যালঘু অংশের এক ব্যক্তির কাছ থেকে স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরা মোটা অংকের চাঁদা চাওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। এরপর থেকে কয়েক দফায় মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে চলে মারপিট, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এই সংঘর্ষের পরিস্থিতিতে গুলিতে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যবসায়ীর বলে খবর। রবিবার আনুমানিক দুপুর বারোটা নাগাদ কদমতলা ব্লক সংলগ্ন ইন্ডিয়ান ক্লাবের সদস্যরা চুরাইবাড়ি কদমতলা সড়কের উপর দাঁড়িয়ে পুজোর চাঁদা সংগ্রহ করছিল। সেইসময় তারা একটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। মোটা অংকের অস্বাভাবিক চাঁদার অংককে কেন্দ্র করে গাড়ির চালক তথা মালিক জহর মিয়ার সাথে বাক বিতণ্ডা শুরু হয় চাঁদা আদায়কারীদের। একসময় ঘটনা মারামারির দিকে গড়ায়। চাঁদা আদায়কারীরা গাড়িতে থাকা এক মহিলা সহ কয়েকজনকে মারধর করে বলে অভিযোগ। তারা জহর মিয়ার টাকা, মোবাইল সব ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। আক্রান্তদের মধ্যে কয়েকজনের বাড়ি কদমতলার চল্লিশদ্রুন এলাকায়। ফলে বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক একই সময়ে একই এলাকার দুই অমুসলিম যুবক নিজেদের সামাজিক মাধ্যমে কুরুচিকর মন্তব্য করে পোস্ট করে। ফলে দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে কদমতলা থানার সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ সংঘটিত করে একাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। অপরদিকে জহর মিয়া অভিযুক্তদের নামধাম দিয়ে কদমতলা থানায় অভিযোগ জানায়। দুই সম্প্রদায়ের এই ঝামেলার বিষয়টি ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কদমতলা থানার সামনে  জড়ো হতে থাকেন উভয় অংশের মানুষজন। মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে পুলিশকে সময় বেঁধে দেওয়া হয় এক ঘণ্টার ভেতরে মূল অভিযুক্ত ইন্ডিয়ান ক্লাবের সদস্য নির্মলেন্দু সেন ও দীপজয় নাথকে গ্রেফতারের জন্য। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়ে সাথে সাথেই মাঠে নামে। এবং কিছু সময়ের মধ্যেই তাদের গ্রেফতার করে। এমত অবস্থায় ডেপুটেশনে আসা কিছু অতি উৎসাহী মুসলিম অংশের যুবক অভিযুক্ত বাপ্পন সেনের বাড়ি সহ অন্য দুটি বাড়িতে এবং কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ঢিল ছুড়ে এবং ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলের দ্রুত চলে আসেন জেলা পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী।তিনি প্রতিবাদকারীদের আশ্বস্ত করেন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে। সে সময় কদমতলা বাজার এলাকা শুনশান হয়ে যায়। অপরদিকে শুরু হয় থানায় ডেপুটেশন দিতে আসা একাংশ মানুষজনের আস্ফালন। তারা বেশ কয়েকটি দোকানে হামলা ও লুটপাট চালায়।পরিস্থিতি  নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়। এদিকে  দুই অভিযুক্তকে আটক করে থানায় নিয়ে এলে তখনকার মতো পরিস্থিতি শান্ত হয়। কিন্তু ঘটনাকে ঘিরে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হওয়াতে কদমতলা বাজার এলাকার দোকানপাট একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়। ডেপুটেশনকারী মুসলিমরাও ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন কদমতলা বাজার এলাকায়  জড়ো হয়ে হিন্দুদের বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে কদমতলা থানার সামনে। তারাও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাতে থাকে। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে ফের মৃদু লাঠিচার্জ করে। এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ, টিএসআর ও সিআরপিএফ বাহিনীর জওয়ানদের। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা মোতাবেক ১৬৩ ধারা জারি করা হয়। গোটা কদমতলা থানা এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে রবিবার সন্ধ্যারাতে ফের দুর্বৃত্ত দলের হামলা হয় কদমতলা বাজারে। বাজারে বেশ কয়েকটি দোকান ভাংচুর করা হয় বলে অভিযোগ। তাছাড়া একটি ভুয়ো খবর ছড়ায় যে কদমতলা বাজার মসজিদে আক্রমণ হতে পারে। এমন খবরে আবারো মুসলিম অংশের লোকজন জড়ো হয় কদমতলা বাজার এলাকায় এবং তারা পাল্টা ভাংচুর চালায় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গুলোতে। পরে পুলিশ ঘটনা সামাল দিতে প্রথমে শূন্যে একশ ষাট রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।  পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ধৈর্য হারা হয়ে পুলিশ আবারও গুলি চালায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে গুলি চালানোর ঘটনায় কদমতলা বাজারের এক মোবাইলের দোকানের মালিক শাহীন চৌধুরীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বলে অসমর্থিত সূত্রে খবর। অপর এক ব্যক্তির পায়েও গুলি লাগে।পাশাপাশি, ওই সংর্ঘষে টিএসআর সহ ১৬ জন পুলিশ আহত হয়েছে বলে খবর।
এদিকে পুলিশি প্রহরায় রাত কাটলেও সোমবার সকালে ফের কয়েকটি দোকান ভাংচুর করা হয় এবং একটি দোকানে অগ্নি সংযোগ ঘটে। যদিও দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে অশান্ত কদমতলা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনিক উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকের পর গোটা এলাকা নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর  টহলদারি।সামাজিক মাধ্যমে কেউ যাতে বিভ্রান্তিকর বা উস্কানিমূলক লেখা  বা ভিডিও পোস্ট না করে তার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার। অন্যদিকে উত্তর জেলায় সামাজিক মাধ্যমে যাতে গুজব না ছড়ায় তার জন্য নেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আইন লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এদিনই বিকেলের দিকে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী রোড মার্চ শেষ হতেই আবারো কদমতলায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বলে খবর। বাজারের দুটি দোকান, সাইকেল এবং গাড়ি ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।  বর্তমানে ওই এলাকায় প্রশাসনের তরফ থেকে বিএনএস ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতির উপর সতর্ক নজর রাখছে প্রশাসন। শারদোৎসবে কদমতলার ঘটনা যাতে প্রভাব না ফেলে তার জন্য গোটা রাজ্যেই আলাদা ভাবে সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।