
মেধাই রাজ্যের সম্পদ।উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করতে সি এম সাথ প্রকল্প মেধাবীদের এগিয়ে চলার পথে নতুন দিশা দেখাবে । শিক্ষার ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা এখন আর বাধা নয়।সিএম সাথ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে এই কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা।
ত্রিপুরা রাজ্যের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা ঘোষণা করেছেন , রাজ্যের উচ্চশিক্ষার ভিত্তি সুদৃঢ় করাই তাঁর সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। সরকারি ও সরকারি-অনুদানপ্রাপ্ত বিদ্যালয়সমূহের অসামান্য কৃতী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে চালু হওয়া চিফ মিনিস্টারস স্কলারশিপ ফর অ্যাচিভার টুওয়ার্ড হায়ার প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি এই বার্তাই দিলেন যে, মেধার পথে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা আর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ২০২৩ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চতর মাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষার মেধা তালিকা থেকে নির্বাচিত মোট ২০০ জন ছাত্রছাত্রীকে বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপকে 'দূরদর্শী' আখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা তাঁর বক্তব্যে জোরালোভাবে বলেন, “সিএম সাথ প্রকল্প কেবল একটি বৃত্তি প্রকল্প নয়, এটি ভবিষ্যৎ ত্রিপুরার প্রতি আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার। কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী যাতে শুধুমাত্র অর্থের অভাবে তার উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন মাঝপথে থামিয়ে দিতে বাধ্য না হয়, তা নিশ্চিত করাই আমাদের সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা বিশ্বাস করি, আজকের এই বিনিয়োগই আগামী দিনে রাজ্যকে আরও আত্মবিশ্বাসী, প্রতিষ্ঠিত ও সক্ষম করে তুলবে। মেধা রাজ্যের সম্পদ, এবং এই সম্পদকে বিকশিত করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তিনি জানান,প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত প্রতিটি শিক্ষার্থীকে এককালীন ষাট হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদান করা হবে, যা তাদের উচ্চশিক্ষা বা পরবর্তী প্রস্তুতিতে এক বিশাল সাহায্য দেবে। মোট ২০০ জন বৃত্তিপ্রাপ্তকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষার মেধা তালিকা থেকে সমসংখ্যক নির্বাচন করা হয়েছে।মুখ্যমন্ত্রী আরও স্পষ্ট করেন যে, এই বৃত্তিপ্রাপ্তদের অবশ্যই ত্রিপুরা রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে এবং ত্রিপুরার যে কোনো সরকারি বা সরকার-অনুদানপ্রাপ্ত বিদ্যালয় থেকে বোর্ডের চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এর মধ্যে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পভুক্ত বিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ -এর অধীনে পরীক্ষা দেওয়া কৃতী ছাত্রছাত্রীরা বিবেচিত হবেন।
মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা এই প্রকল্পের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের উপর জোর দেন—আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের সুনিশ্চিতকরণ। রাজ্যের সকল অংশের মেধাবীদের মধ্যে যাতে সুষম বন্টন বজায় থাকে, সেই জন্য জনসংখ্যা অনুপাতে মেধার ভিত্তিতে বৃত্তিপ্রাপকদের বেছে নেওয়া হয়েছে। এটি নিশ্চিত করে যে, মেধা কেবল শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়, বরং রাজ্যের প্রতিটি কোণ থেকে উঠে আসছে।
আঞ্চলিক বিভাজন অনুযায়ী নির্বাচিতদের সংখ্যা নিরুপমের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি জানান, এই প্রকল্পে ব্লক স্তর থেকে ৭৬ জন,
নগর পঞ্চায়েত থেকে ৬ জন,
পৌর পরিষদ থেকে ১৩ জন
আগরতলা পৌর নিগম থেকে ৫ জনকে বাছাই করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং ন্যায়সঙ্গত রাখতে কঠোর নিয়মাবলী অনুসরণ করা হয়েছে। একাধিক শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর সমান হলে, প্রথমে ছাত্রীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং তার পরে বয়সে কম শিক্ষার্থীদের বেছে নেওয়া হয়েছে। মধ্যশিক্ষা অধিকার জেলা শিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে এই তালিকা প্রস্তুত করে এবং তা বিএমএস পোর্টালের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়।
ডক্টর সাহার নেতৃত্বাধীন ত্রিপুরা সরকারের এই দূরদর্শী ও সুচিন্তিত পদক্ষেপ রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। এটি মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার পথকে শুধু সুরক্ষিতই করেনি, বরং তাদের ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য এক শক্তিশালী অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।