ত্রিপুরা
img

লাগাতার বোমাবাজিতে জিরানিয়া উত্তপ্ত

খুমুলুং-জিরানিয়ায় চরম রাজনৈতিক উত্তেজনা,বোমা বিস্ফোরণ ও পার্টি অফিসে অগ্নিসংযোগ, বিতর্কিত মন্তব্যে শোরগোল। এলাকায় লাগাতার কয়েক দিনের মধ্যে এই ধরনের বোমাবাজিতে আতঙ্ক বাড়ছে।


বুধবার গভীর রাতে খুমুলুং ও পার্শ্ববর্তী জিরানিয়া এলাকায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি গুরুতর রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটল। এর মধ্যে একটি দোকানে বোমা বিস্ফোরণ এবং অন্যটি পার্টি অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এই দুই ঘটনায় এলাকায় তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, যার জেরে শাসক জোটের শরিক টিপ্রা মথা এবং বিরোধী দল বিজেপির কর্মীদের মধ্যে চরম বাগযুদ্ধ শুরু হয়েছে।
​​ঘটনার সূত্রপাত হয় বুধবার গভীর রাতে, আনুমানিক রাত ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে, যখন খুমুলুঙের দুখিয়া কোবরা এলাকার একটি দোকানের সামনে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা শক্তিশালী বোমা ফাটায়। বিস্ফোরণের তীব্র শব্দে এলাকার শান্তি বিঘ্নিত হয়। খবর পেয়ে দ্রুত রাধাপুর থানার পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং তারা তদন্ত শুরু করে।
​আক্রান্ত দোকানের মালিক সাংবাদিকদের কাছে স্পষ্ট জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক নন। তবে তিনি এলাকায় তিপরা মথা ও বিজেপির মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে চলা তীব্র সংঘাতের কথা উল্লেখ করে সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের যে কোনো এক পক্ষের দুষ্কৃতকারীরা প্রতিশোধমূলকভাবে এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। একাধিক এলাকাবাসীও তাঁর এই সন্দেহের প্রতিধ্বনি করেছেন।

​বোমা বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এলাকার এমডিসি (মেম্বার অফ ডিসট্রিক্ট কাউন্সিল) গণেশ দেববর্মা। তিনি সেখানে সরাসরি বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে বোমা ফাটানোর অভিযোগ তোলেন। তবে এই অভিযোগের পাশাপাশি এমডিসি দেববর্মার একটি বিতর্কিত মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন করে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। তিনি প্রকাশ্যে দাবি করেন, “মানুষের বাড়িঘর থেকে ছাগল–শুকর চুরি করে খায় বিজেপি দল।” এমন ভিত্তিহীন এবং চরম মন্তব্যের তীব্র নিন্দা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। ঘটনার সময় মান্দাই বিধানসভা এলাকার বিদায়িকা স্বপ্না দেববর্মাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
 

​এদিকে, এলাকাবাসীর একাংশ ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তাদের দাবি, এই ঘটনা সরকারের অ্যালায়েন্স পার্টনার  তিপরা মথাকে জনসমক্ষে কালিমালিপ্ত করার সুপরিকল্পিত কৌশলও হতে পারে। ফলে, ঘটনাটি কেবল দুষ্কৃতীমূলক না হয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
​​খুমুলুঙের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই একই রাতে বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত জিরানীয়া খলার তিপরা মথার পার্টি অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় সম্পূর্ণ কার্যালয়টি। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিধায়ক স্বপ্না দেববর্মা অন্যান্য দলীয় নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
​এই দুই ধারাবাহিক হিংসাত্মক হামলার ফলে এলাকায় চরম অস্থিরতা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

পুলিশ পুরো বিষয়টি নিয়ে জোরকদমে তদন্ত শুরু করেছে। তবে এমডিসি গণেশ দেববর্মার বিস্ফোরক মন্তব্যের পর রাজনৈতিক বিতর্ক নতুন মাত্রা পাওয়ায়, দ্রুত এই সংঘাত নিয়ন্ত্রণে না এলে বড় ধরনের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুলিশি তদন্তের পরই ঘটনার প্রকৃত কারণ এবং দোষীদের পরিচয় জানা যাবে।