
ত্রিপুরায় বিজ্ঞান শিক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। ডিএনএ ক্লাব প্রকল্পে ৫০টি স্কুলে ১২ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের জন্য।
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জৈব প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগ্রহ বাড়াতে ত্রিপুরা বায়োটেকনোলজি কাউন্সিল এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ত্রিপুরা বায়োটেকনোলজি কাউন্সিল এবং ডিরেক্টরেট অফ বায়োটেকনোলজি-এর যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার আগরতলা সুকান্ত একাডেমির কনফারেন্স হলে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পুরস্কার প্রদান ও বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। রাজ্যের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তরের মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই কর্মসূচির সূচনা করেন।
এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজ্যের ৫০টি স্কুলের ডি.এন.এ. ক্লাব প্রকল্পের দ্বিতীয় বর্ষের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা করে মোট ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এই অনুদান প্রদানের মূল লক্ষ্য হলো, একবারের অনুদান নয়, বরং বছর বছর আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে স্কুলগুলিতে বিজ্ঞান চর্চার একটি ধারাবাহিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা। কাউন্সিল সূত্রে খবর, ডিএনএ ক্লাব প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত রাজ্যের ২২২টি স্কুলকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে নতুন করে আরও ৫০টি স্কুলকে ল্যাবরেটরি সরঞ্জাম কেনা এবং জৈব বিজ্ঞান ভিত্তিক হাতে-কলমে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে।
মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা তাঁর বক্তব্যে কাউন্সিলের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানান, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে জৈব প্রযুক্তি বিষয়ক চিন্তা চেতনাকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। তিনি আশা ব্যক্ত করেন যে এই ধরনের প্রকল্প ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বিজ্ঞান চেতনাকে আরও সহজভাবে পৌঁছে দেবে এবং এর ফলস্বরূপ বিজ্ঞান ক্ষেত্রে নতুন দিশা উন্মোচিত হবে।
এদিনের অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ডিএনএ ক্লাবের শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিবির। দ্বিতীয় বর্ষে ডিএনএ ক্লাবের কাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য এই ৫০টি স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ২০টি নতুন কাজের উপর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে শ্রেণিকক্ষে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহারিক বিজ্ঞান শিক্ষাকে তুলে ধরতে পারেন, তার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।
এছাড়াও, প্রথম বছরের কাজের অগ্রগতির মূল্যায়নের ভিত্তিতে মোট ২৮ জন সেরা শিক্ষক-শিক্ষিকাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে, ডিএনএ ক্লাব কার্যক্রমে বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী ৫০টি স্কুলের মোট ১০০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে 'বেস্ট পারফর্মিং স্টুডেন্ট' হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। অনুষ্ঠানে ডি.এন.এ. ক্লাব অগ্রগতি ও মূল্যায়ন বিষয়ক একটি তথ্য-ভিত্তিক বইয়ের মলাট উন্মোচন করা হয়, যা এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নকে তুলে ধরে।
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তরের সচিব চৈতন্য মূর্তি, ত্রিপুরা বায়োটেকনোলজি কাউন্সিলের সদস্য সচিব মহেন্দ্র সিং এবং যুগ্ম সদস্য সচিব তথা ডিরেক্টরেট অফ বিয়োটেকনোলোজির যুগ্ম অধিকর্তা শ্রী অঞ্জন সেনগুপ্ত সহ কাউন্সিলের অন্যান্য আধিকারিকরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রী সহ প্রায় ৩০০ জনের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে ডিএনএ ক্লাব প্রকল্পটি রাজ্যের শিক্ষাজগতে এক নতুন কৌতুহল ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।