ত্রিপুরা
img

না ফেরার দেশে দীপান্বিতা, বিভিন্ন মহলে শোক এবং ক্ষোভ

চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিল ক্ষুদিরাম বসু ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী দীপান্বিতা পাল ।গত নয় নভেম্বর বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান চলাকালী সময়ে সানস্ট্রোকে আক্রান্ত হয় সে। শিক্ষিকাকে অসুস্থতার কথা বলেছিল সে। কিন্তু তারা তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি ।এদিন দীপান্বিতার শোকার্ত পিতা এবং এলাকাবাসী বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

 

ইদানিং বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠান মানেই বিদ্যালয়গুলির ছাত্র-ছাত্রীদের এনে উপস্থিত করানো একটা অলিখিত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে ।তা সরকারি অনুষ্ঠানই হোক আর বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোন অনুষ্ঠান ।প্রখর রোদে ছাত্র-ছাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হবে ।মাইলের পর মাইল গলি থেকে রাজপথ হাঁটতে হবে ।আর অনুষ্ঠানগুলিতে নেতা-মন্ত্রী এবং আধিকারিকরা মিনিট দশেকের জন্য উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রেখে চলে যাবেন। এটাই হচ্ছে কোন অনুষ্ঠানের নিয়ম নীতি বা কালচার।এমনই একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর ক্ষুদিরাম বসু ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে। বন্দে ভারত অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ।এই অনুষ্ঠানে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে প্রখর রোদে দাঁড়িয়েছিল ক্ষুদিরাম বসু ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রীর দ্বীপান্নিতা পাল ।প্রখর রোদে তার প্রচন্ড অসুবিধা হচ্ছিল ।বিষয়টি সে বিদ্যালয়ের কোন এক দিদিমণিকে জানিয়েছিল। অভিযোগ ,সেই দিদিমণি ছাত্রীটির কথায় কোন আমল দেননি। পরে অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়েই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে দীপান্বিতা। তার বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে মা বাবা বিদ্যালয়ে ছুটে আসে তাকে উদ্ধার করে জিবি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, সান স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে ছোট্ট দীপান্বিতা ।গত সাত দিন জিবি হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে সুস্থ করে তুলতে দিন রাত এক করে দেন ।কিন্তু মঙ্গলবার চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা বের্থ করে দিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দেয় ছোট্ট দীপান্বিতা পাল ।এই মর্মান্তিক ঘটনা শহরবাসীকে আরও একবার নাড়িয়ে তোলে ।এদিন দীপান্বিতার শোকার্ত পিতা জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকারা তার মেয়ের পাশে দাঁড়ান নি। তার মেয়েকে এতটুকু সাহায্য করা হয়নি ।অসুস্থ বোধ করলেও দিদিমণিরা তাকে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখেন।

এদিন এই ঘটনায় দীপান্বিতাদের পাড়ার এক অভিভাবক তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ,গত সাতদিন ধরে জিবি হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিল ছোট্ট দীপান্বিতা ।কিন্তু এই সাতদিন বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকা দীপান্বিতা কে একটি বারের জন্য দেখে আসার প্রয়োজন অনুভব করেননি ।সভ্য সমাজে একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকার এই ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া যায় না বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন এই অভিভাবক ।তিনি আরো জানান ,জিবি হাসপাতালে চিকিৎসক থেকে শুরু করে সব স্বাস্থ্য কর্মীরা  তাকে সুস্থ করে তুলতে প্রাণপণ খেটেছেন ।খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে গেছেন মহকুমা শাসকও ।মহকুমা শাসক যাওয়ার পরেই টনক নড়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

রাজধানীর ক্ষুদিরাম বসু ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের এই মর্মান্তিক ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সমাজের বিভিন্ন মহল। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি উঠতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় এই ঘটনায় প্রশাসন কি উদ্যোগ গ্রহণ করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।