
দীর্ঘদিন ধরেই জল্পনা শোনা যাচ্ছিল যে বিজেপির নতুন সভাপতি বাছাই করা হবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিছুই হচ্ছিল না। শোনা যাচ্ছে, এবার বিজেপি নতুন সভাপতি বাছাই করতে মনস্থির করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আরএসএস সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। এই বৈঠকেই পরবর্তী সভাপতি বাছাই করা হতে পারে।বিজেপির নিয়ম, এক ব্যক্তি, এক পদ। অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি একের বেশি পদে থাকতে পারেন না। গত বছর লোকসভা নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী করা হয় জেপি নাড্ডাকে। তার জায়গায় নতুন করে সর্বভারতীয় সভাপতি নিয়োগ করা হয়নি। এক বছর ধরে তিনি দুই পদ সামলাচ্ছেন।দীর্ঘদিন ধরেই জল্পনা শোনা যাচ্ছিল যে বিজেপির নতুন সভাপতি বাছাই করা হবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিছুই হচ্ছিল না। শোনা যাচ্ছে, এবার বিজেপি নতুন সভাপতি বাছাই করতে মনস্থির করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আরএসএস সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। এই বৈঠকেই পরবর্তী সভাপতি বাছাই করা হতে পারে।মোহন ভাগবতের সঙ্গে এই বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ জাতীয় সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরএসএসের মতামত অগ্রাহ্য করতে পারে না বিজেপি। দলের নিয়ম অনুযায়ী, অন্তত অর্ধেক নতুন রাজ্য সভাপতি নির্বাচন হয়ে গেলে, তারপর কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন করা হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতির ক্ষেত্রে সাধারণত একজনই মনোনয়ন জমা দেন এবং তিনিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
এদিকে সামনে লোকসভা নির্বাচন, তাই সভাপতি নির্বাচনে গতি বাড়াচ্ছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি এবার এক নতুন অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে। চলতি জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে অর্থাৎ ২১ জুলাইয়ের তারিখের আগেই জেপি নাড্ডার উত্তরসূরির নাম ঘোষণা হতে চলেছে—এমনটাই গুঞ্জন নয় বরং দলীয় সূত্রের স্পষ্ট ইঙ্গিত।এরই মধ্যে বিজেপি-র সাংগঠনিক রাজ্যগুলিতে সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে। ৩৭টি সাংগঠনিক রাজ্যের মধ্যে কমপক্ষে ১৯টি রাজ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলেই ঘোষিত হবে পরবর্তী সর্বভারতীয় সভাপতি। জানা গিয়েছে, মঙ্গলের মধ্যেই ২০টি রাজ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই পুদুচেরি ও মিজোরামে নতুন সভাপতি দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। আরও কয়েকটি রাজ্যে যেমন কর্নাটক ও মধ্যপ্রদেশেও নয়া সভাপতিরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। উত্তরাখণ্ডে অবশ্য পুরনোকে ভরসা রেখে মহেন্দ্র সিং ঘাটিকেই আবার সভাপতি পদে বহাল রাখা হয়েছে। বিজেপির সংবিধান অনুযায়ী সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচনের আগে কমপক্ষে অর্ধেক সাংগঠনিক রাজ্যে সভাপতি নির্বাচন আবশ্যিক। এই শর্ত পূরণ হতে চলায়, রাজনৈতিক মহলের দৃঢ় বিশ্বাস নাড্ডার উত্তরসূরি কে হবেন, তার উত্তর মিলবে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে অর্থাৎ আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে। কারণ বাদল অধিবেশনের আগেই সভাপতি পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।অন্যদিকে, ৪ থেকে ৬ জুলাই দিল্লিতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রান্ত ও ক্ষেত্র প্রচারকদের তিনদিনব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। সেখানেই এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে দাবি সংঘঘনিষ্ঠ সূত্রের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপির ভবিষ্যৎ রণকৌশলের দিকনির্দেশ এই নতুন সভাপতির হাত ধরেই নির্ধারিত হবে। তবে নাড্ডার পর এবার কে? এই প্রশ্নের উত্তর এখন আর খুব বেশি দূরে নয়। গেরুয়া শিবিরে আসতে চলেছে নতুন নেতৃত্ব, নতুন গতি এবং সম্ভবত এক নতুন কৌশলের বার্তা।হবেন দলের-র পরবর্তী সর্বভারতীয় সভাপতি? এখনও অব্যাহত সাসপেন্স। তবে দলের অন্দরমহল সূত্রে খবর, ঐতিহাসিক এক বদল আসতে চলেছে গেরুয়া শিবিরে। প্রথমবার মহিলা সর্বভারতীয় সভাপতি পেতে পারে বিজেপি। পার্টির অন্দরে বেশ কয়েকদিন ধরে এই নিয়ে আলোচনা চলছে এবং কয়েকজন প্রথম সারির নেত্রীর নাম নিয়ে কাটাছেঁড়াও হয়েছে। মহিলা ক্ষমতায়ন, সাংগঠনিক সমতা বজায় রাখা এবং আগামী নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সূত্রের খবরে জানা গেছে,নির্মলা সীতারামন, বনথী শ্রীনিবাসন এবং ডি পুরন্দেশ্বরীর নামে চর্চায় রয়েছে। দেশের বর্তমান অর্থমন্ত্রীা নির্মলা সীতারামন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। সম্প্রতি বর্তমান সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং সংগঠনের মহাসচিব বিএল সন্তোষের সঙ্গে দলের পার্টি হেডকোয়ার্টারে সাক্ষাৎ করেছেন নির্মলা সীতারামন। তিনি এই পদে বসলে পার্টি নানা ভাবে ফায়দা পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তিনি পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি হলে দক্ষিণ ভারতে বিজেপির শক্তি বাড়বে। মোদী সরকারের মহিলা ক্ষমতায়নের অ্যাজেন্ডাও বাড়তি গুরুত্ব পাবে। বর্তমান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলেছেন পাশাপাশি তাঁর সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের রাজনীতিতে ডি পুরন্দেশ্বরীর স্থান তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি সে রাজ্যের সাংসদ। অন্ধ্রের বিজেপি সভাপতি পদও সামলেছেন তিনি। সুষমা স্বরাজের মতো প্রভাবশালী বক্তা মনে করা হয় তাকে। তেলুগু, তামিল, হিন্দি, ইংরেজি, ফরাসি ভাষায় দক্ষতা রয়েছে তার। বিদেশের মাটিতেও দল তথা মোদী সরকারের বহুল প্রশংসা করে চর্চিত হয়েছেন। দক্ষিণ ভারতে বিজেপি-র বড় মুখ ডি পুরন্দেশ্বরী।সুপ্রতিষ্ঠিত আইনজীবী থেকে এদিকে রাজনীতিবিদ হয়েছেন বনথী শ্রীনিবাসন। বর্তমানে তিনি তামিলনাড়ু বিধানসভায় কোয়েম্বাটুর দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে বিজেপির বিধায়ক। তার রাজনৈতিক সফর ১৯৯৩ সালে বিজেপি-র হাত ধরে শুরু হয়েছিল। লাগাতার পার্টির সংগঠন সামলেছেন তিনি। বনথী তামিলনাড়ু বিজেপি-তে রাজ্য সচিব মহাসচিব এবং রাজ্য উপাধ্যক্ষ পদ সামলেছেন। অক্টোবর ২০২০-তে বনথীকে দলের মহিলা মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি নিযুক্ত করা হয়েছিল। ২০২২ সালে তিনি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য হন। তিনিই প্রথম মহিলা হিসেবে এই সংগঠনের সদস্য হন। মহিলা ক্ষমতায়ন, সংগঠন মজবুত করা এবং বিধানমণ্ডলে তিনি সক্রিয়া ভূমিকা পালন করেন। কেন্দ্রীয় স্তরেও তার নিজস্ব পরিচিত রয়েছে।এদিকে সূত্রের খবর, মহিলা নেতৃত্ব চাইছে আরএসএসঅও সাম্প্রতিক কালে বিজেপির মহিলা সমর্থকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং দিল্লির মতো রাজ্যে বিধানসভা ভোটে মহিলা সমর্থন বেশি ছিল। ভোট ব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেও ফলত মহিলা সভাপতি নির্বাচিত করতে পারে গেরুয়া শিবির।