
ভারতবর্ষের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও পরম্পরা সারা বিশ্বের মধ্যে দীর্ঘ প্রাচীন। এসবের ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আগামী প্রজন্মকে অবহিত করতে না পারলে এই উৎসবের ঐতিহ্য অধরা থাকবে।সপ্তাহব্যাপী এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগমে সম্প্রীতি, সৌভাতৃত্ব এবং ঐতিহ্যের মিলনতীর্থে পরিণত হয় পুরাতন আগরতলার চতুর্দশ দেবতা মন্দির।খার্চি উৎসবের সূচনা করে একথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা। প্রত্যেক বছরের মতো এবারো হাওড়া নদীর পুণ্যস্নানঘাটে চতুর্দশ দেবতাকে অবগাহনের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী জাতি জনজাতি মানুষের মিলন মেলা খার্চি উৎসব। এবার ২৬৬ বছরে পদার্পন করলো খার্চি পুজো।
বৃহস্পতিবার খার্চি পূজা ও মেলা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা। উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, খার্চি পূজা ত্রিপুরার জাতি-জনজাতিদের অন্যতম প্রধান উৎসব। প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে খার্চি পূজা হয়। আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক চেতনার মেলবন্ধনে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগমে সম্প্রীতি, সৌভাতৃত্ব এবং ঐতিহ্যের মিলনতীর্থে পরিণত হয় পুরাতন আগরতলার চতুর্দশ দেবতা মন্দির।তার কথায়, ত্রিপুরার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, পরম্পরা এত বেশি ভরপুর যে অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় এই ছোট্ট পার্বতী রাজ্য কোন অংশেই কম নয়। এই ধরনের সংস্কৃতি আর অন্য কোন রাজ্যে আছে কিনা তার জানা নেই। সাথে তিনি যোগ করেন, ত্রিপুরায় জনজাতিদের সংস্কৃতি অপূর্ব। এই ধরণের সাংস্কৃতি ত্রিপুরায় লুপ্ত হওয়ার পথে ছিল।ত্রিপুরা সরকার এই সাংস্কৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ভারতবর্ষের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও পরম্পরা অনেক প্রাচীন। সিন্ধু সভ্যতা থেকে শুরু করে হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো সভ্যতা যা সারা পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম দীর্ঘ পুরনো সংস্কৃতি। এখানে খার্চি পুজোও অনুরূপ একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এর একটা সুবিশাল ইতিহাস রয়েছে। এখানে ১৪ জন দেবদেবীকে আমরা পূজা করি। স্মৃতিচারণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছোট বেলায় আমরাও খার্চি পুজোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতাম। এখনকার সময়ের মতো তখন খার্চি পুজোয় আসা এত সহজ ছিল না। তখন নদীর এত জলস্রোত ছিল যে পার হওয়া আতঙ্কের ব্যাপার ছিল। নৌকায় চড়ে নদী পার হতে হতো। তখন অনেক দুর্ঘটনাও ঘটতো। পুজো দিয়ে বাড়ি ফিরে গেলে মনে হতো যে প্রকৃত অর্থে চৌদ্দ দেবতার আশীর্বাদে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পেরেছি। ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরে যাওয়াও তখন খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। গাড়ি গেলেও সেই গাড়ি নৌকায় তুলে পার হতে হতো।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরোবলেন, রাজ্য ব্যাপক উন্নয়নের দিশায় এগিয়ে চলছে। উন্নয়ন এখন এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গেছে যেটা ভাবা যায় না।
এদিন তিনি বলেন, চতুর্দশ দেবতার পূজা ও পরম্পরাকে ধরে রাখতে একটি ট্রাস্ট গঠনের খুব দরকার। উদয়পুর মাতাবাড়ি পরিচালনার জন্য ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। আইনগত কোনো বাধা না থাকলে পুরাতন আগরতলার চতুর্দশ দেবতা মন্দিরেও ট্রাস্ট গঠন করা হবে। খার্চি উৎসব উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী চতুর্দশ দেবতার নিকট সকলের সুখ, সমৃদ্ধি এবং রাজ্যের সার্বিক কল্যাণ প্রার্থনা করেছেন।