ত্রিপুরা
img

সাইকেলে লাদাখে ৫৯ বছরের অজয় !

বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে। একথার সঙ্গে আমরা কম-বেশি সকলেই পরিচিত। তবে এভাবেও ভ্রমণ করে নিজের শখ পূরণ করা যায়, তা হয়তো আমাদের বিশেষ করে যারা পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি তাদের  অনেকেরই কাছেই অবাস্তব না হলেও যথেষ্টই আশ্চর্যের। বাইক বা গাড়িতে দেশ ঘুরে আসার গল্পত এর আগেও বহু শোনা গেছে এবং হামেশাই শুনি। তবে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা শহরের এক বাঙালি  অজয় সাহা একপ্রকার বিনা ট্রেনিংয়ে আগরতলা  থেকে সাধারণ একটি সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন ভ্রমণ ও সমাজকে সচেতন করার নেশায়।তার গন্তব্য ছিল লেহ- লাদাখ। বয়সটাও কিন্তু নেহাত কম নয়।  ৫৮ পেরিয়েছেন অজয় সাহা বেশ কিছুদিন আগে। আপাতত তিনি আগরতলার বন্ধু এবং পরিচিত মহলে ভ্রমণ পিপাসু ও অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ব্যক্তি হিসেবে আইডল হয়ে উঠেছেন! যাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন আগরতলার এবং বহিঃরাজ্যের বহু মানুষ এবং অবশ্যই বন্ধুমহল।  অজয় সাহা লেহ- লাদাখ যাবার সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছিলেন তখন সময়টা অনুকূল ছিল না, পাকিস্তানি সন্ত্রাসীদের নির্বিচার গুলিবর্ষণে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মারা গিয়েছিলেন ২৬ জন পর্যটক। কিন্তু তার আগেই আগরতলা শহরের ধলেশ্বর দেবেন্দ্র দেবনাথ রোড এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা প্রতিষ্ঠিত বস্ত্র ব্যবসায়ী ৫৮ বছরের অজয় সাহা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলেন ,বাইসাইকেলে চেপেই তিনি লেহ লাদাখ পাড়ি দেবেন। ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল মহৎ। সাইকেল চালিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখুন, পরিবেশকে দূষণমুক্ত করুন, অর্থ সাশ্রয় করুন, মনকে খুশি রাখুন এবং অবশ্যই সাইকেল চালানো অভ্যাস করুন, এই কয়েকটি স্লোগান ছিল অজয়ের প্রায় চার হাজার কিলোমিটার যাত্রাপথের মূল স্লোগান। পহেলগাঁওয়ের গন নরহত্যা, রাস্তায় হাজারো বিপদ, প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া যাবে না, রাস্তায় বিপদে-আপদে আপনজনদের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এরকম বহু ফ্যাক্টর অজয়ের যাত্রা পথে প্রাথমিক বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারপর তার  শুভ চিন্তকদেরও ছিল হাজারো বারণ। মে মাসের এক তারিখ তার যাত্রা শুরুর আগের রাত পর্যন্ত তার এই যাত্রাকে সামগ্রিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে আপাতত স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছিলেন নিকট বন্ধুরাও। কিন্তু অজয় ছিলেন নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত তার দৃঢ়তার কাছে হার মেনে  বন্ধুবান্ধব মহলের দাবি  ছিল, পরিস্থিতি বিবেচনা করে যদি যাত্রা পথে তোমার সামনে বাঁধা আসে তবে তখনই তুমি যে জায়গায় পৌঁছেছো সেখান থেকে ব্যাক টু দ্যা প্যাভিলিয়ন হবে। এই শর্তে রাজি হওয়ায় ও  নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকায় অজয়ের বন্ধু মহল তার যাত্রায় আর আপত্তি করেনি। অবশেষে এলো পয়লা মে'র ভোর। বোধজং বয়েজ এইচএস স্কুলের  গেইট থেকে শুরু হলো অজয়ের যাত্রা। জনা কয়েক বন্ধুবান্ধব এবং বোধজং স্কুলেরই প্রাক্তন শিক্ষক প্রদীপ বণিক অজয়কে শুভেচ্ছা জানান, সাইকেল নিয়ে বেরোবার সময় অজয়  সঙ্গে নিয়েছিলেন কিছু জামাকাপড়,টেন্ট  আর শুকনো খাবার। ২০২৫ সালের ১ মে শুরু হল তার অজেয় যাত্রা। মেঘালয়, আসাম,  পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি  ,পাঞ্জাব হয়ে অজয় জম্মু ও শ্রীনগর পৌঁছান সাইকেলে চেপেই। সেখান থেকে সোমবার ৩০ জুন দুই মাস পর পৌছে গেলেন লাদাখ। লাদাখ যাত্রা পথে বহু ভ্রমণ পিপাসুর সঙ্গে তার দেখা হয়। হয়তো সাইকেলের সামনে লেখা তার সচেতনতামূলক শ্লোগান ও রাজ্যের নাম দেখে তারা আলাপ করতে এগিয়ে এসেছিলেন। তার সঙ্গে ছবি তুলে অনেকেই শেয়ার করেছেন সামাজিক মাধ্যমে।  তবে ৫৮ বছর বয়েসী অজয়ের পা আর প্যাডেলের ঘুর্ণনে দূরপাল্লার সাইক্লিংয়ের কোনো ট্রেনিং ছাড়াই  লাদাখ পৌঁছে যাওয়াটা কিন্তু চাট্টিখানি কথা না ! সোমবার ৩০ জুন,বাঙালি প্রবীনের এই অসাধ্য সাধনের গল্পই আজ ঘুরছে অজয়ের বন্ধু মহলে। । বন্ধুরা সকলেই প্রশংসা করেছেন তার অদম্য ইচ্ছা শক্তির। আপাতত  লেহ লাদাখে কয়েকদিন ঘুরার পরিকল্পনা রয়েছে অজয় বাবুর। ভবিষ্যত হয়তো অন্য রকম হতে পারে! কি জানি, আগরতলা ফিরে হয়তো তার ভাগ্যে মিলতে পারে কোনও বিশেষ সম্মান এবং সম্বর্ধনা! তবে সেসব নিয়ে তিনি ভাবছেন না একেবারেই। তার দু' চোখে যে এখনও বাই সাইকেলে করে শুধুই ঘুরে দেখার নেশা।