ত্রিপুরা
img

কে প্রদেশ বিজেপি সভাপতি !

বিজেপির সংবিধান অনুযায়ী, কেন্দ্রশাসিত ও রাজ্য মিলিয়ে ১৯ জন রাজ্য সভাপতি নির্বাচন হলে তবেই জাতীয় সভাপতি নির্বাচন হওয়া সম্ভব। সোমবার মিজোরামের বিজেপি সভাপতির নাম ঘোষণা হওয়ায় সব মিলিয়ে ১৫ জন সভাপতি নির্বাচিত হলেন। দলের লক্ষ্য ছিল, তেলঙ্গানা, ত্রিপুরা, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতেও সভাপতি নির্বাচন সেরে রাখা। কিন্তু তা করতে গিয়ে তেলঙ্গানা ও ত্রিপুরায় অভ্যন্তরীণ বিবাদে জড়িয়ে পড়ে দল এমনটাই গুঞ্জন । এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে অবশ্য বিজেপির থিংক ট্যাংক গত কয়েকদিন ধরেই লাগাতার আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন। অবশেষে সোমবার রাতে প্রদেশ ত্রিপুরায় বিজেপি দলের শীর্ষ নেতৃত্বরা প্রদেশ বিজেপির সভাপতির নাম নিয়ে ঐক্যমতে আসেন বলে খবর।  প্রসঙ্গত ত্রিপুরায় রাজ্য সভাপতি হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অভিমত ছিল , যাকে প্রদেশ বিজেপি সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হবে তিনি হবেন  আরএসএস ঘনিষ্ঠ। যার ফলে বর্তমান প্রদেশ বিজেপি রাজীব ভট্টাচার্যের স্থলাভিষিক্ত কে হবে তা নিয়ে দলের ভেতর গত ৬-৭ মাস ধরে আলোচনা শুরু হয়। প্রদেশ বিজেপি সভাপতি হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। সম্ভাব্য প্রদেশ বিজেপির সভাপতি হিসেবে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের মুখে মুখে ঘুরতে থাকে বেশ কয়েকটি নাম। এরা হলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, সুবল ভৌমিক, ভগবান চন্দ্র দাস, তাপস মজুমদার, তাপস ভট্টাচার্য,  কিশোর বর্মন সহ আরো কয়েকটি নাম। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে বারবার আলোচনার পরেও কার নামে শিলমোহর পড়বে সে বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছিল না। যার কারণে ২৭ জুন দলের তরফে ঘোষণাকৃত ২৯ জুন  প্রদেশ বিজেপি সভাপতি পদে নির্বাচন হবে এবং একই দিনে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হবে এই নোটিসটি বাতিল করা হয়। কিন্তু  খবর বিজেপি দলের তরফ থেকে যাকে প্রদেশ বিজেপির সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার নাম কিছুতেই স্থির হচ্ছিল না তাই স্থগিত করে দেওয়া হয় ২৯ জুনের নির্বাচন। তবে সূত্রের খবর দলীয় নেতৃত্বের আলোচনায় বিবেচিত হচ্ছিল বিধায়ক ভগবান চন্দ্র দাসের নাম।
কিন্তু সূত্রের খবর, তার নামে আপত্তি জানিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা সহ আরো কয়েকজন নেতৃত্ব। ফলে সভাপতি নির্বাচন অনির্দিষ্ট কালের জন্য থমকে যায়। কিন্তু এই প্রদেশ বিজেপির সভাপতি মনোনয়ন নিয়ে জট খুলতে ঘনঘন আলোচনা শুরু হয় দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে। অবশেষে অনেক বিবেচনার পর সামনে আসে প্রাক্তন সাংসদ রেবতী ত্রিপুরার নাম। খুব সম্ভবত প্রদেশে বিজেপির সভাপতি হিসেবে বিজেপির মনোনীত প্রার্থী হতে চলেছেন প্রাক্তন সাংসদ রেবতী ত্রিপুরাই। বেশ কিছু ফ্যাক্টর  সামনে রেখে প্রদেশ বিজেপি সভাপতি হিসেবে রেবতী ত্রিপুরার নামে শিলমোহর পড়তে যাচ্ছে এমনটাই অভিমত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। জানা গেছে সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত প্রদেশ বিজেপি সভাপতি নিয়ে রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্বদের মধ্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা নিজেই প্রদেশ বিজেপির সভাপতি হিসেবে রেবতী ত্রিপুরার নাম প্রস্তাব করেছেন। রেবতী ত্রিপুরার নাম প্রদেশ বিজেপি সভাপতি হিসেবে মনোনীত করার পেছনে বেশ কিছু যুক্তি সামনে উঠে এসেছে। প্রধান বিষয়টি হলো রেবতী ত্রিপুরা যদি প্রদেশ বিজেপি সভাপতি হন তাহলে জনজাতি অংশে সংগঠনকে মজবুত করতে  জনজাতি মোর্চার নেতারা বাড়তি অক্সিজেন পাবেন। পাশাপাশি প্রদ্যুৎ কিশোর দেব বর্মনকেও চাপে ফেলা সম্ভব। কারণ প্রদ্যুৎ কিশোর এবং রেবতী ত্রিপুরার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কে যে জটিলতা রয়েছে তা রাজ্যের মানুষ জানেন। বিগত এডিসি নির্বাচনেও রেবতী ত্রিপুরা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোরকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। তাছাড়া বিগত এডিসি নির্বাচনে বিজেপির ফলাফল খুব যে খারাপ হয়েছে এমনটাও নয়। তাই আসন্ন ২০২৬এর এডিসি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি দল মাস্টার স্ট্রোক হিসেবে প্রদেশ বিজেপি সভাপতির দায়িত্বভার রেবতী ত্রিপুরার ওপর দিতে চাইছে এমনটাই খবর। অর্থাৎ জনজাতিদের মধ্যে বিজেপির আদর্শের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি, জনজাতি অংশে প্রদ্যুতের প্রভাব খর্ব করার কৌশল নিতেই প্রদেশ বিজেপি সভাপতি হিসেবে রেবতী ত্রিপুরাকে দল বেছে নিয়েছে এমনটাই খবর।