দেশ
img

চোখ রাঙাচ্ছে করোনা, সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের

দেশে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে করোনার সংক্রমণ। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, গত সপ্তাহে যেখানে সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৫৭, সেখানে এই সংখ্যা এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০০৯-এ। গত কয়েক দিনে নতুন করে ৭৫২ জন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, রাজধানী দিল্লিতেই এক সপ্তাহে ৯৯ জনের দেহে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে এবং বর্তমানে জাতীয় রাজধানীতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৪। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, কেরালা বর্তমানে সর্বাধিক সক্রিয় করোনা রোগীর রাজ্য, যেখানে ৪৩০ জন সংক্রমিত। এরপরেই আছে মহারাষ্ট্র ২০৯ জন, দিল্লি ১০৪ জন, গুজরাট ৮৩ জন, তামিলনাড়ু ৬৯ জন, কর্ণাটক ৪৭ জন, উত্তরপ্রদেশ ১৫ জন, রাজস্থান ১৩জন, পশ্চিমবঙ্গ ১২ জন পুদুচেরি ৯জন, হরিয়ানা ৯ জন অন্ধ্রপ্রদেশ ৪, মধ্যপ্রদেশ ২, তেলেঙ্গানা ১, গোয়া ১ এবং ছত্তিসগড়ে ১ জন। তবে, এখনও পর্যন্ত ওড়িশা, উত্তরাখণ্ড, সিকিম, পাঞ্জাব, চণ্ডীগড়, লাদাখ, মিজোরাম, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, দাদরা নগর হাভেলি ও দমন এবং দিও, জম্মু-কাশ্মীর, এবং ঝাড়খন্ড-এ একজনও করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেনি। মহারাষ্ট্রে করোনায়  কমপক্ষে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেরালায় ২ জন এবং কর্ণাটকে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সাম্প্রতিক তথ্যে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে কেরালায় সবচেয়ে বেশি ৩৩৫ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ মিলেছে। তারপরে রয়েছে মহারাষ্ট্র ১৫৩ জন, দিল্লি ৯৯ জন এবং গুজরাতে ৭৬ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, সম্প্রতি ভারতে দুটি নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্ট সনাক্ত হয়েছে — এনবি.১.৮.১ এবং এলএফ.৭ । তামিলনাড়ুতে এনবি.১.৮.১ এর একটি ও গুজরাটে এলএফ.৭ এর চারটি সংক্রমিত ধরা পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্ট দুটিকে ‘পর্যবেক্ষণাধীন ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বর্তমানে চিন ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে এই ভ্যারিয়েন্টগুলির জন্য সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানা গেছে।দেশজুড়ে আইসিএমআর এবং আইডিএসপি-এর মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত অসুস্থতার নজরদারি চালানো হচ্ছে। বেশিরভাগ সংক্রমিতের দেহে হালকা ধরনের উপসর্গ দেখা গেছে এবং বাড়িতে একান্তবাসে রয়েছেন রোগীরা। সিঙ্গাপুর, হংকং এবং এশিয়ার আরও কিছু দেশে সম্প্রতি কোভিড সংক্রমণ বেড়েছে বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে। তবে এই নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলি আগের ভ্যারিয়েন্টগুলির থেকে বেশি সংক্রামক বা মারাত্মক নয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।এদিকে, দিল্লিতে সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেন, “আমাদের সমস্ত হাসপাতাল সব রকম পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। কোনও আতঙ্কের প্রয়োজন নেই। তিনি জানান, পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই একটি অ্যাডভাইসরি জারি করা হয়েছে। বিহারে চলতি ঢেউয়ের প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে পটনার এক ৩১ বছরের যুবকের শরীরে। রোগীর বিদেশ বা রাজ্যের বাইরে যাওয়ার ইতিহাস নেই। তার সংক্রমণ হালকা এবং সমস্ত নিয়ম মেনে চিকিৎসা চলছে, জানিয়েছেন পটনার সিভিল সার্জন ডা. অভিনাশ কুমার সিংহ। তবে, স্বাস্থ্য মন্ত্রক এখনও কোভিড আক্রান্তের তালিকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ওই রোগীর নাম নথিভুক্ত করেনি। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে প্রস্তুতি বাড়াতে বলা হয়েছে। ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর সহ সমস্ত যন্ত্রপাতি সচল রাখা, আইএলআই/এসএআরআই আক্রান্ত রিপোর্ট করা ও পজিটিভ স্যাম্পলগুলিকে লোক নায়ক হাসপাতালে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ও প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।