ত্রিপুরা খবর
img

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সঙ্গে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর

দুধ, ডিম, মাছ এবং মাংস উৎপাদনে রাজ্যকে স্বনির্ভর করার জন্য ৯৬৯ কোটি টাকা মূল্যের প্রকল্পের প্রস্তাব করলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা ।
বুধবার কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে দুধ, ডিম, মাংস এবং মাছ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের বিষয়ে উচ্চ-স্তরীয় টাস্ক ফোর্সের ভার্চুয়াল সভায় অংশগ্রহণ করে এই প্রস্তাব তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। সভায় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, দুধ, ডিম, মাংস এবং মাছ ত্রিপুরায় জনসংখ্যার স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে। তিনি বলেন, ডেয়ারি খাতে ২০২৩-২৪-এ ত্রিপুরায় দুধের উৎপাদন ছিল ২.৪৭ লক্ষ মেট্রিক টন, যেখানে চাহিদা ছিল ২.৮২ লক্ষ মেট্রিক টন। এক্ষেত্রে উৎপাদনের তুলনায় চাহিদার ব্যবধান ছিল ০.৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দুধ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য ত্রিপুরা আর্টিফিসিয়াল ইনসেমিনেশন (এআই) -এ প্রচলিত এবং সেক্স সর্টেড সিমেন উভয়কে বেছে নিয়েছে। এই পদ্ধতিতে মহিলা বাছুরের উৎপাদন বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।  (যা মহিলা থেকে পুরুষ অনুপাত ৯০:১০ হবে)। গত ৩ বছরে ত্রিপুরা এআই এর সেক্স সর্টেড সিমেন (এসএসএস) ব্যবহার করে ২.৬ লক্ষ ডোজ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৫০,০০০ মহিলা বাছুর উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও, উন্নত মানের ক্রস-ব্রিড গাভী বিতরণ করা হয়েছে, বাছুরের বৃদ্ধির পুষ্টিকর খাবার কৃষকদের সরবরাহ করা হয়েছে এবং গোমতী মিল্ক ইউনিয়নের অধীনে দুধ সমবায়কে শক্তিশালী করা হয়েছে।মুখ্যমন্ত্রী ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিটি জেলায় ২০০টি গবাদি পশু রাখার ক্ষমতা সম্পন্ন ডেয়ারি ফার্ম এবং ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গোমতী কোঅপারেটিভ মিল্ক প্রোডিউসারস ইউনিয়ন লিমিটেডকে এনডিডিবি (ন্যাশনাল ডাইরি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড) এর সহায়তার মাধ্যমে শক্তিশালী করার দাবি রাখেন। এনডিডিবির সহায়তায় প্রতিটি মহকুমায় বাল্ক মিল্ক কুলিং স্টেশন/মিল্ক চিলিং ভ্যান গড়ে তোলার প্রস্তাব রাখেন।ডিমের খাত সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ত্রিপুরায় ডিমের মাথাপিছু প্রাপ্যতা প্রতি বছর প্রতি ব্যক্তি পিছু ৮৭টি ডিম, উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ, যেখানে প্রতি বছরে প্রতি ব্যক্তি পিছু গড়ে ২৫টি ডিম। মুখ্যমন্ত্রী প্রাণী সম্পদ বিকাশ যোজনার অধীনে গত ২ বছরে প্রতি বছর প্রায় ৩ লক্ষ ছানা বিতরণ করে এটা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।এই লক্ষ্যকে আরও বাড়ানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ভিলেজ কাউন্সিলের কৃষক/স্বসহায়ক গ্রুপ/উৎপাদক গোষ্ঠীগুলিকে মিনি হ্যাচারি সরবরাহের জন্য ১৫ কোটি টাকা প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছেন এবং বর্তমানে থাকা ছয়টি পোল্ট্রি/হাঁসের সরকারি খামারগুলির উন্নতিকরণের জন্য ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও একটি প্রকল্পের প্রস্তাব রাখেন। 
 মাংস খাতে মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরায় একটি মাংস উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং প্যাকেজিং সেন্টার স্থাপন করার জন্য ১৭ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব করেছেন। উত্তর -পূর্ব ভারতে পশু খাদ্য ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ত্রিপুরায় প্রাণী সম্পদ, হাঁস -মুরগি এবং ফিশারিগুলির জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় ফিড মিক্সিং প্ল্যান্ট স্থাপন করার প্রস্তাব রাখেন তিনি। এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরায় একটি অত্যাধুনিক রোগ নির্ণয় ল্যাবরেটরি স্থাপনের প্রস্তাবও দেন।মুখ্যমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরা যেহেতু বাংলাদেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত, তাই আন্ত-সীমান্ত রোগের প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা এখানে খুব বেশি। যদিও সেরো-সার্ভিলেন্স এবং নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়মিত টিকা প্রদানের ব্যবস্থা হয়। বাংলাদেশের সাথে রাজ্যের সান্নিধ্য এবং রোগগুলির সাথে সম্পর্কিত সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে, উত্তর-পূর্বের ত্রিপুরায় একটি অত্যাধুনিক রোগ নির্ণয় পরীক্ষাগার স্থাপন করার প্রস্তাব রাখা হয়।  রাজ্যে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, উত্তর পূর্ব কাউন্সিল স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য আগামী ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন সহজ করতে পারে। এরমধ্যে রয়েছে মৎস্য চাষে সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ১২৪.০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১,০০০ হেক্টর নতুন জলাশয় তৈরি, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ৪২৫.০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫,০০০ হেক্টর জলাশয় তৈরি। ১৩০.০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০০ হেক্টর বিদ্যমান জলাশয়ে সুসংহত মাছ চাষ। ১২০.০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০০০ হেক্টর বিদ্যমান জলাশয়ে মাছ চাষ। ত্রিপুরায় ৫.০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১টি ব্রুড ব্যাংক গড়ে তোলা। আধুনিক সুবিধা সহ পাইকারি এবং খুচরা মাছের পোনা বাজার স্থাপনের জন্য ১০.০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।