ত্রিপুরা খবর
img

নিজ কন্যা সন্তানকে হত্যার চেষ্টার দায়ে গ্রেফতার পিতা

এশিয়ান টাইমসের খবরের জেরে নড়াচড়ে বসলো পুলিশ।
নিজ কন্যা সন্তানকে হত্যার 
চেষ্টার দায়ে গ্রেফতার পিতা। বোধজং নগর থানার পুলিশ তাকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে। গৌতম ঘোষ নামে এই পাষণ্ড ব্যক্তি নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করেছে পুলিশের কাছে।
 এশিয়ান টাইমসে, কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়ায় নিজের সন্তানকে হত্যার চেষ্টা এবং নিজের মেয়েকে বাঁচাতে মায়ের স্বামীর ঘর ছেড়ে দেওয়ার খবরটি প্রকাশিত হতেই গোটা রাজ্য জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নড়াচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। অবশেষে বৃহস্পতিবার নিজ কন্যা সন্তানকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে পিতা গৌতম ঘোষকে গ্রেফতার করলো বোধজং নগর থানার পুলিশ। তিন মাসের কন্যা সন্তানকে মারধর সহ বিক্রি করার চেষ্টার গুরুতর অভিযোগ তুলেছিল শিশুটির জন্মদাত্রী মা মমতা মুড়া সিং। এদিন দুপুরে খয়েরপুর দাসপাড়া নিজ বাড়ি থেকেই অভিযুক্ত বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খয়েরপুর দাসপাড়া এলাকার প্রাণ গোপাল ঘোষের ছেলে গৌতম ঘোষ। গত এক বছর আগে বিয়ে করেছিল পিতৃ-মাতৃহীন  অনাথ মমতাকে।এমনিতে তাদের দাম্পত্য জীবনে সংসারে কোন অশান্তি ছিল না। তাদের ঘরে গত সাড়ে তিন মাস আগে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এরপরেই এই কন্যা সন্তানকে নিয়ে সংসারে অশান্তি তৈরি হয়। কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে গৌতম ঘোষ। বারবার সে তার স্ত্রীকে কন্যা সন্তানটিকে বিক্রি করার প্রস্তাব দেয়। তাতে তার স্ত্রী রাজি না হওয়ায় সাড়ে তিন মাসের এই ছোট্ট কন্যা সন্তানটিকে সে প্রায় প্রতিদিন মারধর করতে শুরু করে । অভিযোগ এই ছোট্ট তিন মাসের শিশুটি কিছু না বুঝলেও তার বাবা যখন তার কাছে আসত তখনই সে আতঙ্কে নীল হয়ে যেত, এমনকি শিশুটি অজ্ঞান হয়ে যেত বলে মা মমতা মুড়া সিং জানিয়েছেন সাংবাদিকদের। মায়ের বক্তব্য অনুযায়ী, পহেলা বৈশাখের আগের রাত্রে গৌতম ঘোষ চূড়ান্ত হিংস্রতা দেখিয়েছে শিশু কন্যাটির উপর।  শিশুটিকে মারধর করার পাশাপাশি তাকে মাথার উপর তুলে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল গৌতম। পাশাপাশি শিশুটিকে কুড়ি হাজার টাকায় বিক্রি করে দিতে চাপ সৃষ্টি করে স্ত্রীর উপর। পরে তার স্ত্রী মমতা সন্তানের প্রাণ বাঁচাতে পয়লা বৈশাখের দিন বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এবং জিবি হাসপাতালে এসে আশ্রয় নেয়। জিবি হাসপাতালেই যুব প্রেরণা সামাজিক সংস্থার সদস্যদের চোখে পড়ে এই মহিলা সহ তার কন্যা সন্তানটি।  শিশুটির মায়ের মুখ থেকে সব শুনে যুব প্রেরণা সামাজিক সংস্থার পক্ষ থেকে ওই অসহায় মা সহ তার ছোট্ট কন্যা সন্তানকে প্রাথমিকভাবে নিজেদের কাছে আশ্রয় দেয়। পরবর্তী সময়ে বুধবার সংস্থার সদস্যরা বোধজংনগর থানায় ঘটনাটি জানায়। এবং মা ও শিশুকে রাধানগরে একটি বেসরকারি হোমে রাখার ব্যবস্থা করে। বৃহস্পতিবার সকালে ওই সামাজিক সংস্থার সহযোগিতায় অভিযুক্ত গৌতম ঘোষকে খয়েরপুরস্থিত তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে বোধজং নগর থানার পুলিশ।
বুধবার এই খবর এশিয়ান টাইমসে সম্প্রচারিত হতেই, রাজ্য শিশু সুরক্ষা ও অধিকার কমিশন এবং ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রটেকশন ইউনিটের আধিকারিকরা রাজধানী আগরতলা শহরের রাধানগরস্থিত ওই বেসরকারি হোমে গিয়ে ওই শিশুটির মায়ের সাথে কথাবার্তা বলেন। পাশাপাশি তারা শিশুটির শারীরিক খোঁজখবর নেন। শিশু সুরক্ষা ও অধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে জানা গেছে শুক্রবার মা ও শিশুকে সরকারিভাবে হোমে নিয়ে যাওয়া হবে। এদিকে বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত গৌতম ঘোষ পুলিশের প্রশ্নের মুখে পড়ে সে তার শিশুকন্যার উপর অমানুষিক নির্যাতন করেছে তার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। এক্ষেত্রে শিশুর পিতা গৌতম ঘোষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।