দেশ
img

বুথ ফেরত সমীক্ষায় মহারাষ্ট্রে বিজেপি মহাজুটি, ঝাড়খন্ড অনিশ্চিত

নিজস্ব প্রতিনিধি:- মহারাষ্ট্রের মহারণে বাজিমাত করতে চলেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহাজুটি।ফলে মহারাষ্ট্রে উড়বে গেরুয়া নিশান, বলছে একাধিক বুথ ফেরত সমীক্ষা। বেশ কয়েকটি সমীক্ষক টিমের দাবি অনেক পিছিয়ে মহা বিকাশ আঘাড়ি। লোকসভা নির্বাচনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন ২০২৪ সালের শেষ বড় নির্বাচন মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন। সেই মহারাষ্ট্রের মহারণে বাজিমাত করতে চলেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহাজুটি। এমনটাই বলছে একাধিক সংস্থার বুথ ফেরত সমীক্ষা। বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলির দাবি অনুযায়ী, ২৮৮ আসন বিশিষ্ট মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ক্ষমতাসীন মহাজুটি ফের  ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে।এক্সিট পোলের আভাস মিলে গিলে মহারাষ্ট্রের ফলাফল বিরোধীদের জন্য বড় ধাক্কা হতে চলেছে। কারণ লোকসভায় দেশের যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেগুলির মধ্যে সবার উপরে ছিল মহারাষ্ট্র। মারাঠাভূমে মহারাষ্ট্রে কার্যত ক্লিন সুইপ করে বিরোধীরা। এক্সিট পোলের আভাস মিললে চার মাসের মধ্যে পুরো খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছেন একনাথ শিণ্ডে-দেবেন্দ্র ফড়ণবিসরা। এর নেপথ্যে অবশ্যই কৃতিত্ব দিতে হবে ‘লাডলি বহিন’-সহ সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্পকে। তবে এই ফলাফল হলেও শেষ পর্যন্ত বিজেপিই সরকার গড়বে সেটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ভোটের পরেও অনেক ‘খেলা’ হতে পারে।যদিও এই এক্সিট পোলের ফলাফলগুলিকে একেবারে নিখুঁত ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। সাম্প্রতিক অতীতে একাধিকবার দেখা গিয়েছে এক্সিট পোলের ইঙ্গিত একেবারেই মেলেনি। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ ২০২৪ লোকসভা এবং হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচন। আবার একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে এক্সিট পোলের ফলাফল পুরোপুরি মিলে গিয়েছে। বুধবার মহারাষ্ট্রের ২৮৮ আসনে এক দফায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় তথা শেষ দফার ভোট হয়েছে ঝাড়খণ্ডের ৮১টির মধ্যে ৩৮টি বিধানসভা আসনেও। ভোটপর্ব শেষের পর নির্বাচনী বিধি মেনে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে বুথফেরত সমীক্ষার ফল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিজেপি জোটের জয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রায় সব ক’টি সমীক্ষাতেই দু’পক্ষের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত রয়েছে। অর্থাৎ, মহারাষ্ট্রে একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে ‘মহাজুটি’ সরকার এবং ঝাড়খণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের নেতৃত্বাধীন ‘মহাগাঠবন্ধন’ সরকারের ভবিষ্যৎ জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী শনিবার গণনার দিন পর্যন্ত। ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ‘জাদুসংখ্যা’ ১৪৫। মূল লড়াই ক্ষমতাসীন বিজেপি-শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে)-এনসিপি (অজিত)-এর জোট ‘মহাজুটি’ এবং বিরোধী কংগ্রেস-শিবসেনা (ইউবিটি)-এনসিপি (শরদ)-এর জোট ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’র মধ্যে। এ ছাড়াও মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস), বহুজন বিকাশ আঘাড়ী, বঞ্চিত বহুজন আঘাড়ী, অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (মিম)-সহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দলও লড়াইয়ে রয়েছে।চাণক্যের বুথফেরত সমীক্ষা বলছে, ‘মহাজুটি’ ১৫২-১৬০ এবং ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’ ১৩০-১৩৮টি আসনে জিততে পারে। অন্যেরা ৬-৮টিতে। ম্যাট্রিজ়ের বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত, বিজেপি জোট ১৫০-১৭০, ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’ ১১০-১৩০ এবং অন্যেরা ৮-১০টি বিধানসভা আসনে জিততে পারে। পি-মার্কের পূর্বাভাস, বিজেপি জোট ১৩৭-১৫৭, বিরোধী জোট ১২৬-১৪৬ এবং অন্যদের ২-৮টিতে জেতার সম্ভাবনা। যদিও দৈনিক ভাস্করের পূর্বাভাস বিরোধী জোট ১৩৫-১৫০টি আসনে জয় পেতে পারে মহারাষ্ট্রে। বিজেপির ‘মহাজুটি’ ১২৫-১৪০ এবং অন্যেরা ২০-২৫টি। অর্থাৎ, সরকার গঠনে ‘নির্ণায়ক’ হবে নির্দল ও ছোট দলগুলি। ৮১ আসনের ঝাড়খণ্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৪২ আসন। ক্ষমতাসীন ‘মহাগাঠবন্ধনে এবার জেএমএম কংগ্রেস আরজেডির সঙ্গে রয়েছে বাম দল সিপিআইএমএল লিবারেশন। অন্য দিকে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএতে এ বার প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুদেশ মাহাতোর ‘অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, বিহারের নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসোয়ানের দল এলজেপি  রয়েছে।অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া-র পূর্বাভাস, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ ১৭-২৭, ‘ইন্ডিয়া’ ৪৯-৫৯ এবং অন্যেরা ১-৬টি বিধানসভা আসনে জিততে পারে ঝাড়খণ্ডে। ম্যাট্রিজ়ের বুথফেরত সমীক্ষা বলছে, এনডিএ ৪২-৪৭, ‘ইন্ডিয়া’ ২৫-৩০ এবং অন্যেরা ১-৪টি আসনে জিততে পারে। চাণক্যের ইঙ্গিত, এনডিএ ৪৫-৫০, ‘ইন্ডিয়া’ ৩৫-৩৮ এবং অন্যদের ঝুলিতে ৩-৫টি আসন যাওয়ার সম্ভাবনা। যদিও পি-মার্কের দাবি, বিজেপি জোট ৩১-৪০, ‘ইন্ডিয়া’ ৩৭-৪৭ এবং অন্যেরা ১-৬টি আসন জিততে পারে ঝাড়খণ্ডে।নরেন্দ্র মোদি তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে অবশ্য ইতিমধ্যেই বিধানসভা ভোট হয়েছে হরিয়ানা এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরে। হরিয়ানায় সমস্ত নজির ভেঙে জয়ের হ্যাটট্রিক করেছে বিজেপি। জম্মু ও কাশ্মীরে ক্ষমতায় আসতে না পারলেও এক দশক আগের তুলনায় আসন বেড়েছে পদ্মশিবিরের। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ধার ও ভার অটুট রয়েছে তা প্রমাণ করা যেমন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর কাছে কাছে চ্যালেঞ্জ, তেমনই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৃহত্তম দল কংগ্রেসের লড়াই পর পর হারের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর। সেই লড়াইয়ের ফল জানা যাবে আগামী শনিবার।