ত্রিপুরা
img

বিজেপি সর্বনাশা বনধের বিরোধিতা করে: পাপিয়া

ধর্মঘট বা হরতাল সব সময় কর্মনাশা। একদিনের বনধেই প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় দেশকে। একদিন বনধ হলে গোটা দেশের প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। তাই বিজেপি সরকার সব সময় বনধের বিরোধিতা করে আসছে। তাই বুধবার যে কর্মনাশা বনধ আহ্বান করা হয়েছে তার  বিরোধিতা করবে প্রদেশ বিজেপিও। মঙ্গলবার এক সাংবাদিক বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন বিজেপি নেত্রী পাপিয়া দত্ত। পাশাপাশি নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য বিজেপি সরকার কি কি করেছে সাংবাদিক বৈঠকে তার অফিস বিস্তারিত চোরে চোরেছেন এদিন পাপিয়া দত্ত।

সর্বনাশা বনধের বিরোধিতা করবে বিজেপি সরকার। এই রাজ্যেও বনধের বিরোধী প্রদেশ বিজেপি। মঙ্গলবার এক সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দিলেন প্রদেশ বিজেপি নেত্রী পাপিয়া দত্ত। পাশাপাশি সাংবাদিক বৈঠকে এদিন  বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর শ্রমিকদের কল্যাণে যে সমস্ত  গুরুত্বপূর্ণ ও জনমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তারও বিবরণ দিলেন পাপিয়া দত্ত। তিনি জানালেন,
রাজ্যের বর্তমান সরকার চা শ্রমিকদের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৮ সালের পর ন্যূনতম মজুরি ২১০৫ থেকে বাড়িয়ে প্রথমে ২১৭৬ এবং সাম্প্রতিককালে তা আরও বাড়িয়ে ২২০৪ করা হয়েছে। যদিও পূর্ববর্তী বামফ্রন্ট সরকার চা শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার কথা বলত, বাস্তবে তাদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির কোনো কার্যকর প্রয়োগ করা হয়নি। তিনি জানান, চা শ্রমিকদের কল্যাণে রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রী চা শ্রমিক প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ৩,১৬৬ জনকে জমির পাট্টা এবং ৪,৯২২ জনকে প্রায়োরিটি গ্রুপ রেশন কার্ড প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি, চা শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার  মাধ্যমে ঘর, শৌচাগার, পানীয় জলসহ বিভিন্ন মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
পাপিয়া দত্ত বলেন, ২০১৮ সালের পর রাজ্যে নির্মাণ শ্রমিকদের কল্যাণে একাধিক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। এক্ষেত্রে,
বিবাহের আর্থিক অনুদান ১০,০০০ থেকে বাড়িয়ে  ৫০,০০০ করা হয়েছে।
মাতৃত্বকালীন সুবিধা ২৫,০০০ থেকে বাড়িয়ে ২৮,০০০ করা হয়েছে।
 অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা ৫,০০০ থেকে বাড়িয়ে ১০,০০০ করা হয়েছে।
 নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর পর পরিবারকে সহায়তা ২০,০০০ থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ এবং দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৪০,০০০ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ করা হয়েছে।পেনশনের সুবিধা পাওয়ার জন্য ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর ৬ মাসের মধ্যে আবেদন করার নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। তদ্রূপ, মহিলা নির্মাণ শ্রমিক বা তাদের কন্যার বিবাহজনিত আর্থিক সহায়তার জন্য বিবাহের ৬ মাসের মধ্যে আবেদন করার শর্তও শিথিল করা হয়েছে।
পাপিয়া দত্ত জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ত্রিপুরা বিল্ডিং অ্যান্ড আদার কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড  কর্তৃক নিবন্ধিত নির্মাণ শ্রমিকদের মোট ১৯.৮০ কোটি আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি, ১৬,৫৫৫, জন অসংগঠিত শ্রমিককে ই-শ্রম পোর্টালে নিবন্ধিত করা হয়েছে।এই পদক্ষেপগুলির মাধ্যমে রাজ্য সরকার নির্মাণ শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্থাপন করেছে।তিনি বলেন, ত্রিপুরা এমপ্লয়িজ স্টেট ইনস্যুরেন্স সোসাইটির আওতায় ১৭ হাজার ২০০ জন রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা লাভ করেছেন, ২ হাজার ৯৬৮ জন রোগী সেকেন্ডারি চিকিৎসা লাভ করেছেন এবং ১১৪ জন রোগী সুপার স্পেশালিটি চিকিৎসা লাভ করেছেন। এই উদ্দেশ্যে ২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তার কথায়,ভারতসরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় কর্তৃক অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য ইশ্রম পোর্টাল নামে একটি জাতীয় ডাটাবেস তৈরী করেছে। , যার মাধ্যমে অসংগঠিতশ্রমিক দের কর্মসংস্থানের সর্বোত্তম উপলব্ধি এবং বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের যেমন প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মানধন যোজনা, ন্যাশানাল পেনশন প্রকল্প, নির্মান শ্রমিক কল্যান প্রকল্প ইত্যাদি সুবিধাগুলি তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এটি অভিবাসী শ্রমিক, নির্মানশ্রমিক, গিগ এবং প্লেটফর্মকর্মী ইত্যাদি অসংগঠিত শ্রমিকদের প্রথম জাতীয়ডাটাবেস। এই ডাটাবেইসে নাম নথিভুক্ত করার ১ বছরের মধ্যে দুর্ঘটনাগ্রস্থ হয়ে মারা গেলে ২ লক্ষ টাকা এবং আংশিক প্রতিবন্ধী হলে ১ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। এখন পর্যন্ত আমাদের রাজ্যের মোট ৫ জন শ্রমিক মোট ৯ লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদান পেয়েছেন। ই-শ্রম পোর্টালে আমাদের রাজ্যের মোট ৮,৯৩,৭৪৯ জন অসংগঠিত শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত হয়েছে।

রাজ্যসরকার ত্রিপুরা দোকান এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সংশোধনী বিল, ২০২৪” এনেছে। এবং যার লক্ষ্য হচ্ছে ব্যবসা করার সহজতা। কোন রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ই ও ডি বি একটি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কারনে, ত্রিপুরা সরকারের শিল্প দপ্তর  বি আর এ পি এর অধিনে ই ও ডি বি  এর জন্য ত্রিপুরা দোকান এবং প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৭০ এ মহিলা শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা সংশোধনীর প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই সংশোধনের মাধ্যমে মহিলা শ্রমিকগন যেকোন দোকান অথবা প্রতিষ্ঠানে রাত্রি ৮টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা অব্দি কাজ করার স্বাধীনতা পাবে। দোকান অথবা প্রতিষ্ঠান মালিক কে, মহিলা শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত থাকার ব্যবস্থা, বিশ্রামাগার, রাত্রিকালীন শিশুরক্ষনী, মহিলা শৌচাগার, মহিলাদের সন্মান রক্ষা, যৌন হয়রানী থেকে সুরক্ষা এবং মহিলা শ্রমিকগনকে নিজ বাড়ী থেকে দোকান অথবা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত যাতায়াতের ব্যবস্থার সুবন্দোবস্ত করতে হবে।
এছাড়াও শ্রমিকদের স্বার্থে  কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মানধন যোজনা, অটল পেনশন যোজনা, এনপিএস স্কীম, প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা, প্রধানমন্ত্রী জীবনজ্যোতি বীমা যোজনা প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে।
তাছাড়া রাজ্যে গিগ শ্রমিকদের জন্য রাজ্যসরকার নিবন্ধিত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করেছে এবং ইতিমধ্যে ৫৮৯ শ্রমিকদের নিবন্ধিকরন করা হয়েছে।
পাপিয়া দত্ত বলেন, ভারতের সংসদ শ্রম আইনগুলিকে আরও সহজ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। আগে দেশে মোট ৪৪টি শ্রম আইন ছিল, যেগুলো নানা সময়ে প্রণীত ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। এসব আইনের জটিলতা দূর করতে এবং আধুনিক শ্রম পরিবেশ গড়ে তুলতে ২০২০ সালে এই ৪৪টি আইনকে একত্রিত করে চারটি সার্বিক  শ্রম বিধিতে রূপান্তর করা হয়েছে। ত্রিপুরা সরকারও এই কোডগুলি বাস্তবায়ন করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করছে।এই সকল পদক্ষেপ রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় ত্রিপুরার শ্রমজীবী মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধরনের উদ্যোগ শ্রমিক কল্যাণকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা যায়।