ত্রিপুরা
img

সত্যি কে প্রদ্যোত নাকি রঞ্জিত, নাকি পুরোটাই নাটক

শনিবার, মথা আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে, বিজেপি- মথা- জোট থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি দিলেন রঞ্জিত দেববর্মা । শুধু তাই নয়, বিজেপি সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের এই হুমকি যে তিনি মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোৎ কিশোরের সাথে আলোচনা ক্রমেই দিচ্ছেন, তাও  সাংবাদিক সম্মেলনে বসেই জানান রঞ্জিতবাবু। অন্যদিকে,পরবর্তীতে প্রদ্যোৎ কিশোরকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রদ্যোৎ জানালেন এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কার কথা সঠিক প্রদ্যোত না রঞ্জিত। রাখিস দুজনের তৈরি করা এটি একটি সি- গ্রেড ছবির চিত্রনাট্য।

 

সাংবাদিক সম্মেলন করে তিপরা মথার বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা বললেন সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেবে মথা। এ ব্যাপারে প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মার সায় রয়েছে। কিন্তু ৮০ ডিগ্রি ঘুরে এব্যাপারে মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোরকে জিজ্ঞাসা করলে আকাশ থেকে পড়লেন তিনি। নিপুন অভিনেতার মতো বললেন আমি জানি না তো!  সাংবাদিক বৈঠকে রঞ্জিত কি বলেছে আমি জানিনা এ ব্যাপারে পরে আমি রঞ্জিতকে জিজ্ঞাসা করে নেব ।  প্রদ্যোতের এই জবাব কিন্তু জন্ম দিল গভীর রহস্যের। তিপরা মথার প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যোত কিশোর।  তার নির্দেশেই দল পরিচালিত হয়ে আসছে সেটা রাজ্যের সবাই জানে।  কিন্তু রঞ্জিত দেববর্মা সাংবাদিক বৈঠকে, মথা আগামী দিনে সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেবে বলে যে দাবি করেছেন  সেটা কি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মা জানেননা, নাকি তার অগোচরেই  এই সাংবাদিক বৈঠকে এই ঘোষণা হয়েছে। তবে প্রদ্যোতের বক্তব্য অনুযায়ী সাংবাদিক বৈঠক করবেন রঞ্জিত দেববর্মা সেটা জানতেন তিনি। এক্ষেত্রে দলের একজন বিধায়ক দলের মূল মাথার অনুমতি ছাড়াই  শাসক দলের উপর থেকে দল  সমর্থন প্রত্যাহার করবে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন, এক্ষেত্রে তার সেই ঘোষণা করার অধিকার  আছে কিনা সেটাও কিন্তু প্রশ্ন।  রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে দলের সদস্যদের মধ্যে আলাপ আলোচনা ছাড়া এবং ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রত্যেকের মিলিত সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে এই ধরনের ঘোষণা দেওয়া কখনোই সম্ভব নয়। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ধরে নিতে হয় এত বড় সিদ্ধান্তের ঘোষণা যখন বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা দিয়েছেন তাহলে দলের অন্যান্য সদস্যরা তো বটেই প্রদ্যোত কিশোরও সাংবাদিক বৈঠকে এই ঘোষণা হবে তা জানতেন। এক্ষেত্রে  সাংবাদিক বৈঠকে বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা বললেন, তিপরা মথার দাবি পূরণ না হলে আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে মথা শাসক দলের জোট ছেড়ে  বেরিয়ে আসবে। এ ব্যাপারে তার সঙ্গে বুবাগ্রার এক প্রস্থ কথা হয়েছে। বাকি কথা হবে নয় জুলাইয়ের পর। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাংসদ  কৃতি সিং দেববর্মাও বিজেপির দল ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন বলে  দাবি করেছেন রঞ্জিত বাবু। কিন্তু রঞ্জিত বাবুর এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে প্রদ্যোত যে অভিব্যক্তি সহকারে নিজের প্রতিক্রিয়া দিলেন, তাতে তার অভিনয় দক্ষতাই ফুটে উঠেছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী তিনি এ ধরনের ঘোষণা হতে পারে কিছুই জানতেন না। তিনি যদি সত্যিই এই ব্যাপারে কিছুই না জেনে থাকেন, তাহলে দলের ওপরে তার বাঁধন আলগা হয়ে গেছে সেটাই মানতে হবে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলছেন তাহলে কি দলের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই প্রদ্যোতের। নাকি এটাও তাদের রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার কৌশল। কিন্তু রঞ্জিত দেববর্মার ঘোষণার পর দলের সুপ্রিমো প্রদ্যোত যা বলেছেন, অর্থাৎ তার কথা থেকে যা বেরিয়ে এসেছে, এই মুহূর্তে দল শাসক দলের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করবে সে ধরনের আভাসই নেই। বরং তিনি বলেছেন,তিনি সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়টির বিন্দু বিসর্গ ও জানেন না । পাশাপাশি, প্রদ্যোৎ কিশোর বললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহার সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং সেই আলোচনা সন্তোষজনক । এক্ষেত্রে, রঞ্জিত বাবুর বক্তব্য কি তাহলে রাজনৈতিক রসিকতা ? মোদ্দা কথা, সাংবাদিক সম্মেলন থেকে প্রশ্ন উঠে গেল মথার অদ্ভুত রাজনীতি নিয়েই । প্রশ্ন উঠলো, তবে কার কথা বিশ্বাসযোগ্য ? রঞ্জিতবাবু না প্রদ্যোৎ কিশোরের ? উল্টো রথের দিনে, কার হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে মথা পরিচালনার দড়ি ? প্রদ্যোতের, না রঞ্জিত বাবুর ? না কি , এই সাংবাদিক সম্মেলন, জোট থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি বা বিজেপি সাংসদের বিজেপি থেকে পদত্যাগের কথাবার্তা একেবারেই ফালতু রাজনীতি ? রঞ্জিত প্রদ্যোতের যোগসাজশেই তৈরি করা হয়েছে সি-গ্রেড হিন্দি ছবির বাজারি সংলাপ ? উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ ।