ত্রিপুরা
img

সিভিল সার্ভিস অফিসার'স ইন্সটিটিউটের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেন মুখ্যমন্ত্রী

রাজ্যে কর্মরত সিভিল সার্ভিস অফিসারদের জন্য ৩১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন সিভিল সার্ভিস অফিসার'স ইন্সটিটিউট। রবিবার এই ইন্সটিটিউটের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা। একই সাথে সেখানে আয়োজিত এক রক্তদান শিবিরে রক্তদাতাদের উৎসাহিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি  বলেন, ছোটবেলায় প্রত্যেকের ভেতরেই একটা কৌতুহল থাকতো লাল বাতি লাগিয়ে গাড়ি চড়ে যে সমস্ত অফিসাররা ঘোরাফেরা করেন তারা কি কাজ করেন। বড় হলে তারা কি কাজ করে সেই সম্পর্কে একটা ধারণা জন্মায়। পাশাপাশি ছোটবেলায় অনেকেই এই লালবাতি চড়া মানুষগুলোর মত হতে চাইতেন। এই ধরনের মানসিকতা আগে যেমন ছিল এখনও রয়েছে। তবে এটা ভাল লক্ষণ। কারণ একজন সিভিল সার্ভেন্ট হওয়ার জন্য তখন থেকেই শিশু-মনে জ্ঞানীগুণী বড় মানুষ হওয়ার যে ইচ্ছা জন্মায় সেটা পূরণ করতে প্রতিযোগিতায় সে নেমে  পড়ে এবং নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করার ইচ্ছা জাগ্রত হয় তার মনে। তবে সবার মনোবাসনা পূরণ হয় না। কে কি হবেন সেটা ভবিষ্যতের পরিপার্শ্বিক অবস্থা ঠিক করে দেয়। তবে সিভিল সার্ভিস অফিসার হবার মনোবাসনা অনেকেরই থাকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগে একটা সময় ছিল যখন বাইরে থেকে সিভিল সার্ভেন্ট অফিসাররা রাজ্যে আসতেন। কিন্তু রাজ্যে এসেই  তারা কবে রাজ্য থেকে যেতে পারবেন সেই মানসিকতা নিয়ে চলতেন। কারণ বাইরে থেকে যারা আসেন তাদের এরাজ্যে দীর্ঘস্থায়ীভাবে থেকে কাজ করার জন্য  সেরকম পরিকাঠামো ছিল না। তাই তারা ট্রান্সফার নিয়ে যাবার জন্য ব্যস্ত থাকতেন। বর্তমানে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের তরফ থেকে জনগণের স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এই কাজগুলো বাস্তবায়নের সঠিক রূপকার হলেন সিভিল সার্ভিস অফিসাররা। তাদের উপর ভরসা করেই সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তাই এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই সিভিল সার্ভিস অফিসারদের জনসংযোগের কাজে দক্ষ হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু হাতের পাঁচ আঙ্গুল যেমন সমান হয় না তেমনি সিভিল সার্ভিস অফিসাররা সবাই একই ধরনের কাজ করতে পারবেন সেটাও ঠিক নয়। কিন্তু বিগত দিনে দেখা গেছে এই সিভিল সার্ভিস অফিসারদের উপর প্রেসার ক্রিয়েট করে কাজ আদায় করার চেষ্টা হতো। যার কারণে সে সময় সঠিক কাজ কোন সময় সঠিকভাবে হয়নি। কারণ আগে একটা মানসিকতা ছিল, নিজেদের লোক হলেই সেই কাজ তাকে দিয়ে করানো হবে।তিনি সেই কাজটি তুলতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে ওই সিভিল সার্ভিস অফিসারের যোগ্যতা যাচাই করা হতো না। বর্তমান সময়ে সিভিল সার্ভিস অফিসারদের সেই দম বন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বর্তমান রাজ্য সরকার তাদের কাজের পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করেছে। সিভিল সার্ভিস অফিসারদের জন্য কাজের পরিবেশ অর্থাৎ পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গেলে উন্নয়নমূলক কাজে আরও গতি আসবে বলেই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে ট্যালেন্টেড ছেলেমেয়েরা সিভিল সার্ভিস লাইনে আসছেন। এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজ্যবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন, ছেলে মেয়েদের সিভিল সার্ভিস লাইনে উৎসাহী করে তুলতে। কারণ সিভিল সার্ভিস সেক্টরে জনসেবা করার সুযোগ অন্যান্য সেক্টর থেকে অনেক বেশি। তাই আদর্শবান ট্যালেন্টেড ছেলে মেয়েরা এখন এই লাইনে বেশি আসছেন।আয়েশ আরামের জন্য তারা এই লাইনে আসছে না, কাজ করার সুযোগ বেশি বলেই তারা এখন এই লাইনে ইন্টারেসটেড হচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য ট্যালেন্টেড সিভিল সার্ভিস অফিসাররা নিয়োজিত হচ্ছেন। তাদের মাধ্যমে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজের একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কাজের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ত্রিপুরা রাজ্যের আগামী ভবিষ্যৎ উজ্জল। রাজ্যের বিকাশের গতি ত্বরান্বিত হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান বর্তমানে রাজ্যে ৫৯ জন আইএস অফিসার রয়েছেন, আইপিএস অফিসার রয়েছেন ৪২ জনের মত। তাছাড়া রয়েছেন ৪০ জন আইএফএস অফিসার।৪৭০ টিসিএস অফিসার এবং ১৫২ জন টিপিএস অফিসার। রাজ্যে অবস্থানকারী এই সিভিল সার্ভিস অফিসারদের জন্যই রাজ্যের প্ল্যানারি অধিবেশন সফলভাবে করা গেছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, শুধু প্ল্যানারী অধিবেশন নয়, রাজ্যের জি-২০ বৈঠকও সফলভাবে করা সম্ভব হয়েছে রাজ্যের সিভিল সার্ভিস অফিসারদের কারণেই, বিগত বছরের ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতিও অনায়াসে সামলানো গেছে রাজ্যের সিভিল সার্ভিস অফিসারদের কর্ম দক্ষতায়। রাজ্যের সিভিল সার্ভিস অফিসাররা ভালোভাবে কাজ করছেন বলেই রাজ্য সরকারেরও উন্নয়নমূলক কাজগুলো সময় মতো বাস্তবায়ন করার কনফিডেন্স বাড়ছে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও রাজ্যের সিভিল সার্ভিস অফিসারদের এই কাজের অগ্রগতি পরিলক্ষিত করেছেন। তাই ত্রিপুরার জন্য উদার হস্ত হয়ে তিনি সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আর এই কারণে রাজ্যের বাজেটও ৪ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। বর্তমান সময়ে সিভিল সার্ভিস অফিসারদের দিয়ে তৈরি হয়েছে টিম ত্রিপুরা। এই টিম ত্রিপুরার কাজের ধারাবাহিকতা এবং মনোবল ধরে রাখা গেলে আগামী দিন ত্রিপুরা রাজ্য উন্নয়নের  শিখরে পৌঁছে যাবে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।