ত্রিপুরা
img

অনামিকা হত্যাকান্ডে ধৃতকে রিমান্ডে আনলো পুলিশ

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় খুন করা হয়েছেগৃহবধূ অনামিকা আচার্যকে। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইতিমধ্যেই খুনে জড়িত সন্দেহে পুলিশের হাতে আটক একই অ্যাপয়েন্টমেন্টের বাসিন্দা প্রতিবেশী যুবক। তাকে কোর্টে পেশ করা হলে বিচারক অভিযুক্তকে পাঁচ দিনের জন্য পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছেন।
 সুশান্তর কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মেরে ফেলা হল দুর্গা চৌমুহনির শিক্ষিত গৃহবধূ অনামিকা আচার্যকে৷ ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ১৫ মে বৃহস্পতিবার সকালে দুর্গা চৌমুহনির বিপণী বিতানের ঠিক উল্টো দিকে অবস্থিত  দুর্গা অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থান করছিলেন গৃহবধূ অনামিকা৷
সকালে স্বামী রাহুল ভট্টাচার্য তার ব্যাঙ্কের কাজে বাইকে বিলোনীয়া চলে গিয়েছিলেন৷ জানা গেছে স্বামী চলে যেতে না যেতেই , প্রথমে গৃহবধূকে ফোন করে অভিযুক্ত৷ পরে দোতলা থেকে চার তলায় গৃহবধূর ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ে সে৷ খুনের ঘটনাটি তখনই ঘটে৷ আনুমানিক সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে পৌনে সাতটায় সুশান্ত এই কোন কেন্দ্রটি সংঘটিত করেছে৷ সে সময় ঘরে ঢুকে সরাসরি অনামিকাকে কুপ্রস্তাব দেয় সুশান্ত৷ তাতে রাজি না হওয়ার কারণে সুশান্ত ক্রমশ উগ্র হয়ে ওঠে এবং গৃহবধূর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে৷ বেডরুমে খাটের উপর উঠে পড়ে সুশান্ত ৷ এক সময় গৃহবধূর মাথায় আঘাত করে৷ সেই আঘাতের ফলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গৃহবধূ৷ গভীর আঘাতের কারণে  মস্তিষ্কের ডান পাশ দিয়ে অনর্গল রক্ত বেরুতে থাকে৷ সেই সময় সুযোগ বুঝে ছুটে দোতলায় অর্থাৎ নিজের ফ্ল্যাটে চলে যায় সুশান্ত৷ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলেই মারা যান অনামিকা৷ 
চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় শুক্রবার মাঝ রাতে অভিযুক্ত সুশান্তকে একই এপার্টমেন্টের দোতলা থেকে গ্রেফতার করে রামনগর ফাঁড়ির তদন্তকারী পুলিশ অফিসার দেবব্রত বিশ্বাস৷  তিনি জানিয়েছেন এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে অনামিকা আচার্যের মোবাইল আচমকা গায়েব হয়ে গিয়েছিল৷যদিও যখন তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল তখন পরিবারের মানুষ বলেছিলেন মৃতদেহের পাশেই ছিল মোবাইলটি৷ সেই থেকে পুলিশের সন্দেহ হয়৷ পরে গৃহবধূর মোবাইল কল লিস্ট ট্র্যাকিং করে সুশান্তর মোবাইল নম্বর পাওয়া যায় এবং দেখা যায় সে বেশ কয়েকবার একই সময়ে অর্থাৎ মৃত্যুর ঠিক কয়েক মিনিট আগেও  ফোন করেছিল গৃহবধূকে৷
তদন্তকারী পুলিশ জানিয়েছেন, স্বামী রাহুল ভট্টাচার্য সপ্তাহের ছয়দিন বিলোনীয়াতে অবস্থান করতেন তার ব্যাঙ্কের কাজে৷ সেই থেকেই একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে অভিযুক্ত সুশান্ত ওই তরুণী অর্থাৎ ২৩ বছরের গৃহবধূর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে৷ বিষয়টি দুর্গা অ্যাপার্টমেন্টের বেশ কয়েকজন লোকের নজরেও উঠে এসেছিল৷ সেই থেকে দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে একা অবস্থান করা সুশান্ত তার কুমতলব চরিতার্থ করার জন্য ওই গৃহবধূর উপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে৷ পুলিশের অনুমান এদের এই নিবিড় সম্পর্ক গত পাঁচ মাস ধরে চলছিল৷
তদন্তকারী পুলিশ জানিয়েছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ঘটনার সময়কালে অভিযুক্ত সুশান্তর গতিবিধি তথা এপার্টমেন্টে তার আনাগোনার বিষয়টি আঁচ করা গেছে৷ সে হয়তো ভেবেছিল যে মোবাইলটি গায়েব করে দিলেই এবং সকল কল লিস্ট ডিলিট করে দিলেই হয়তো গোটা ঘটনাটা চুপসে যাবে৷ কিন্তু সেই ব্যাপারটা আদো হয়নি৷ মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই ঘটনার অভিযুক্ত সুশান্তকে চিহ্ণিত করা যায় এবং সে মোবাইল ফোনটি তার ঘর থেকেই পুলিশ উদ্ধার করে৷
চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় পুলিশের হাতে উঠে এসেছে আরও বেশ কিছু তথ্য যাতে প্রমাণিত হয় মৃতের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের দুর্বল সম্পর্ক ছিল৷ কেননা অভিযুক্তের ফ্ল্যাট থেকে গৃহবধূর উড়নাও পুলিশ আবিষ্কার করেছে৷প্রথমত অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা হাতে নিলেও পরবর্তীতে খুনের মামলা নিয়েছে রামনগর ফাঁড়ির তদন্তকারী পুলিশ৷  তদন্তকারী পুলিশ জানিয়েছেন এখন তাকে রিমান্ডে এনে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং ধারণা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া  সম্ভব হবে৷ রামনগরের ফাঁড়িতে এর কেস নম্বর ৫০/২০২৫৷ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩২৯(৪) ও ১০৩(১) মোতাবেক অভিযুক্ত সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেছে পুলিশ৷ জানা গেছে এই অভিযুক্ত একটি মোবাইল কোম্পানির সেলস ম্যানেজার হিসেবে আগরতলায় কাজ করত৷ সাধারণ সেলস ম্যানেজার হয়ে সে কি করে ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি ফ্ল্যাট কিনে নিতে পেরেছিল তা নিয়েও পুলিশের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে গেছে৷ শনিবার  ধৃত সুশান্তকে আদালতে পেশ করে পুলিশ রিমান্ডে আনার আবেদন জানানো হয়। পুলিশের আবেদনে সাড়া দিয় বিচারক ধৃতের পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে জানালেন সরকারি পক্ষের আইনজীবী দিলীপ দেবনাথ।