ত্রিপুরা
img

সরকারি হোমের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শিশু বিক্রির অভিযোগ

বিভিন্ন সময় রাজ্যে বেশ কয়েকটি শিশু বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠে এসেছে। প্রশাসনের দাবী প্রতিটি ক্ষেত্রেই হস্তান্তরিত শিশুটি উদ্ধার করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের দাবি রাজ্যের শিশু বিক্রির মত ঘটনা হয় না। এটা বিরোধীদের প্রচার। কিন্তু এবার
খোদ সরকারি হোম থেকে শিশু বিক্রি করে দেবার অভিযোগ উঠলো। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে থানায় মামলা করেছেন খোদ শিশুটির মা।
রাজ্যে শিশু বিক্রি হচ্ছে এই অভিযোগ যেন সরকারকে কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। যদিও বেশিরভাগ সময়েই অভাবের তাড়নায় শিশু বিক্রি হচ্ছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলছেন, তবে এবার ব্যতিক্রমী অভিযোগ উঠে এলো মেলাঘরের বাসিন্দা এক মায়ের তরফ থেকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য চলতি মাসেই সিমনা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে একদিনের একটি শিশু সন্তান অভাবের তাড়নায় বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। যদিও  পরবর্তী সময়ে ওই হস্তান্তরিত শিশুটিকে উদ্ধার করে এনে হোমে রেখেছেন শিশু সুরক্ষা কমিশনের সদস্যরা। কিন্তু এবার খোদ হোম থেকেই শিশু বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন মা।সরকারি হোমে থাকা শিশু বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ উঠতেই তীব্র চঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই তিন বছরের শিশু সন্তানের মা মেলাঘর থানায় এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এমনকি নিজের সন্তান ফিরে পেতে মেলাঘর থানার সামনে তিনি ধর্ণাও দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। মায়ের অভিযোগ তার তিন বছরের শিশুটিকে বিক্রি ও পাচার করে দিয়েছে হোমে থাকা আধিকারিকরা৷ সংবাদ সূত্রে প্রকাশ  মেলাঘর থানার অন্তর্গত বানিয়াছড়া এলাকার এক মা আর্থিক দুর্বলতার জন্য দুই কন্যা সন্তানকে আগরতলার নরসিংগড় স্টেইট ফাউন্ডিং সরকারি হোমে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু তার আর্থিক সমস্যা দিন দিন বাড়ায় গত ছয় থেকে সাত মাস আগে তিনি তার তিন বছরের তৃতীয় কন্যাটিকেও সরকারি হোমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তী সময়ে তিন বছরের ছোট সন্তানটিকে হোমে দেওয়ার জন্য  নরসিংগড় স্টেইট ফাউন্ডিং ওয়েলফেয়ার অফিসার নিবেদিতা দত্তের সাথে তিনি যোগাযোগ করেন৷ মায়ের দাবি অনুযায়ী সে সময় নিবেদিতা দত্ত নাকি তাকে বলেছিলেন শিশুটিকে নিয়ে আগরতলায় পশ্চিম জেলা আদালতের সামনে আসার জন্য৷ নিবেদিতা দত্তের কথা অনুযায়ী তিনি  শিশুটিকে নিয়ে আগরতলার কোর্ট চত্বরে যান এবং সেখানে নরসিংগড় স্টেইট ফাউন্ডিং হোমের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অফিসার নিবেদিতা দত্ত  এবং তার স্বামী অ্যাডভোকেট অরিন্দম দেব সহ হোমের প্রাক্তন সুপার ভারতী কপালি একটি কাগজে শিশুটির মায়ের স্বাক্ষর রেখে শিশুটিকে হোমে দেওয়া হবে বলে নিয়ে যায়। মায়ের দাবি ওই সময় তাকে ১০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলেন নিবেদিতা দত্ত৷ কিন্তু তিন সেই টাকা ফিরিয়ে দেন৷ কারণ তিনি জানেন তার ছোট কন্যা সন্তানকে সরকারি হোমে দেওয়া হচ্ছে৷ মায়ের অনিচ্ছা দেখে তারা টাকা না দিয়ে শিশুটিকে নিয়ে চলে যান। কিছুদিন পর মা যখন সন্তানের টিকা দেওয়ার নথিপত্র নিয়ে ওই সরকারি হোমে তার সন্তানকে দেখতে গিয়েছিলেন তখন হোমের দায়িত্বে থাকা নিবেদিতা দত্ত  নাকি টিকা দেওয়ার নথিপত্র গুলো রেখে দেন, কিন্তু তার ছোট সন্তানটিকে দেখাননি। বেশ কয়েকবার এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মায়ের অভিযোগ, কয়েক বার তিনি এইভাবে নিজ সন্তানকে হোমে দেখতে গিয়ে না দেখেই ফিরে এসেছেন নিবেদিতা দত্তের কৌশলে৷ মায়ের দাবি এরপরই  তার সন্দেহ হয় যে হোমে গেলে তার সন্তানকে না দেখানোর পেছনে কোন কারণ রয়েছে৷ পরে যখন হোমের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অফিসার নিবেদিতা দত্তকে এই বিষয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করেন তখন তার কাছে তার সন্তান বিক্রি এবং পাচার করে দেওয়া হয়েছে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় বলে মায়ের দাবি। এক্ষেত্রে তার অভিযোগ  নিবেদিতা দত্ত নাকি তাকে হুমকি দিয়েছেন , যদি এই বিষয়ে তিনি বেশি বাড়াবাড়ি করেন তাহলে তার বাকি দুই সন্তানকে হোম থেকে  বের করে দেওয়া হবে এবং তাদেরও বাইরে বিক্রি করে দেওয়া হবে৷ তখনই মা সন্তানের জন্য অস্থির হয়ে পড়েন এবং সন্তানকে ফিরে পেতে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি শুরু করেন৷ পরবর্তী সময়ে এই ঘটনা তিনি জানান সিপাহীজলা জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে৷ তবে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি শিশুটির মাকে এতদিন ধরে খুঁজে পাচ্ছিল না৷ অবশেষে বৃহস্পতিবার ওই শিশুটির মাকে সিপাহীজলা জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি তাদের হেফাজতে আনে৷ শুক্রবার শিশুটির খোঁজে সিপাহীজলা জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্য এবং চাইল্ড লাইনের কর্মীরা সকাল থেকে বেরিয়ে পড়েন৷  চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যরা খোঁজখবর করে জানতে পারেন যে শিশুটি নড়সিংগড়স্থিত হোমে নেই। পাশাপাশি সরকার  পরিচালিত  হোমের দায়িত্বে থাকা হোমের আধিকারিকদের  কাছ থেকে সিপাহীজলা জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যরা আরও  জানতে পারেন শিশুটিকে নাকি দত্তক দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কাগজে পত্রে স্বাক্ষর 

করেছেন শিশুর মা নিজেই। কিন্তু শিশুটির মার অভিযোগ,তার কন্যা সন্তানকে দত্তক দেওয়ার বিষয়ে কোন কিছু তাকে জানানো হয়নি। তিনি আরও অভিযোগ করেন হোমের ওয়েলফেয়ার অফিসার নিবেদিতা দত্ত, হোমের প্রাক্তন সুপার ভারতী কপালি ও নিবেদিতা দত্তর স্বামী আইনজীবী অরিন্দম দেব মিলে তার কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন।
সামগ্রিক এই ঘটনা নিয়ে  নড়েচড়ে বসেছে সিপাহীজলা জেলা প্রশাসন সহ রাজ্য সমাজ শিক্ষা দপ্তর  ও শিশু সুরক্ষা  কমিশন৷ শুক্রবার প্রশাসনের আধিকারিকরা  আগরতলার নরসিংগড় স্ট্রেইট ফাউন্ডিং হোমের আধিকারিকদের শিশুটিকে দত্তক দেওয়ার ব্যাপারে  জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন৷  নিবেদিতা দত্তকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা। সেখানে নিবেদিতা দও এবং হোমের প্রাক্তন সুপার ভারতী কপালির  কথাবার্তায় প্রশাসনিক আধিকারিকদের কিছুটা সন্দেহ হয়৷ ফলে সিপাহী জলা জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের তরফ থেকে শিশুটির মাকে নির্দেশ দেওয়া হয় এই বিষয়ে হোমের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অফিসার নিবেদিতা দত্ত সহ তার স্বামী অরিন্দম দেব এবং প্রাক্তন সুপার ভারতী কপালির বিরুদ্ধে  লিখিত মামলা দায়ের করতে৷ এদিকে শনিবার বিকেলে রাজ্য পুলিশের সদর দপ্তরেও এই ঘটনার খবর যায়৷ পরে শিশুটির মা শনিবার বিকেলে মেলাঘর থানায় অভিযুক্ত নিবেদিতা দত্ত  সহ তার স্বামী অরিন্দম দেব এবং হোমের প্রাক্তন সুপার ভারতী কপালির বিরুদ্ধে লিখিত  মামলা দায়ের করেন৷ পরে মামলাটি মেলাঘর থানার পুলিশের পক্ষ থেকে আগরতলা পশ্চিম থানায় হস্তান্তর করা হয়৷ এই মামলার দিকে নজর রাখছে সিপাহীজলা জেলা শাসক সহ রাজ্য পুলিশের সদর দপ্তর৷ শনিবার বিকেলে শিশুটির মা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরতে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দাবি জানিয়েছেন, সরকার যেন খুব দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং তার সন্তানকে  যেন ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন৷ তবে সরকারি দপ্তরের আধিকারিকদের  এই ধরনের অপরাধে তীব্র গুঞ্জন শুরু হয়েছে ৷ সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকেও জোরালো দাবি উঠছে বিষয়টিতে রাজ্য সরকার যেন অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে হোমের আধিকারিকরা যদি সত্যিই অপরাধ করে থাকেন তবে তাদের  বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সহ ওই সন্তানটিকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করে৷