ত্রিপুরা
img

পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের অমানবিকতা

পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অমানবিক গাফিলতির ফলে বিধবা বৃদ্ধা মহিলা ৩ বৎসর ধরে পারিবারিক পেনশন পাওয়া থেকে বঞ্চিত। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে মামলা হলে অবশেষে হাইকোর্ট থেকে ওই বিধবা মহিলাকে অবিলম্বে পেনশন প্রদান করার জন্য নির্দেশ দিল।
গোমতী জেলার উদয়পুর নিবাসী  ললিত মোহন গোস্বামী, ত্রিপুরা সরকারের পিডব্লিউডি দপ্তরে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।২০০৬ সালের ১ মার্চ চাকরি থেকে তিনি অবসর গ্রহন করার পর ললিত মোহন গোস্বামীর নামেই তার পেনশন বুক ইস্যু হয়। এই পেনশন বইটির নম্বর Pen-2/TRP/S/SUP/6806। এবং ওই পেনশন বুক মূলে তৎকালীন ইউবিআই  উদয়পুর শাখায় স্বামী স্ত্রী ললিত গোস্বামী ও গীতা গোস্বামী ২০০৬ সালের ২৮ মার্চ  যৌথ নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন  একাউন্ট নাম্বার ছিল. 0462015792। এই নাম্বারে নিয়মিত ভাবে ললিত বাবু তার মাসিক পেনশন তুলতেন । টাকা তোলার প্রথা ছিল হয় ললিত বাবু নয় তার স্ত্রী টাকা তোলার অধিকারী।  এখানে উল্ল্যেখযোগ্য ললিত বাবুর  পুরা নাম ললিত মোহন গোস্বামী হওয়া সত্ত্বেও কর্মরত দপ্তর ছাড়া, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু মহল ও পাড়ায় তিনি ললিত গোস্বামী নামেই সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। তার আধার কার্ড, পেন কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ইত্যাদিতেও ললিত গোস্বামী নামটিই নথিভুক্ত হয়। ললিত গোস্বামী জীবিত অবস্থাতেই  ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর  এফিডেভিটের মূলে অফিসে অবগত করান যে ললিত মোহন গোস্বামী ও ললিত গোস্বামী একই ব্যাক্তি। পরবর্তী সময় ২০২১  সনে  ইউবিআই ব্যাঙ্ক, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের সাথে একত্রিভূত হয়। দুই ব্যান্ড একত্রীকরণ হওয়ার পরে ও ললিত বাবুদের যৌথ একাউন্ট নম্বর ও নামের কোনরূপ পরিবর্তন হয় নাই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় বিগত  ২০২২ সনের ২৯ মে ললিত গোস্বামীর মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী  গীতা গোস্বামী স্বামীর ডেথ সার্টিফিকেট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংক এ জমা দিয়া পারিবারিক পেনশন প্রদানের দাবি করলে, অনেক টাল বাহানা করার পর পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক শাখা অফিস তাকে জানায়
পেনশন বুক এর সাথে ডেথ সার্টিফিকেট এর নামের সাথে গরমিল হওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাহার নামে পারিবারিক পেনশন দিতে অক্ষম। অথচ পেনশন বুক ললিত মোহন গোস্বামী নামে থাকা সত্ত্বেও তার ব্যাংক একাউন্ট ললিত গোস্বামী নামে ছিল। তৎসত্বেও দীর্ঘ ১৬ বৎসর যাবৎ নিয়মিত ভাবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ললিত গোস্বামী নামে পেনশন প্রদান করছিল।গত ২০২৫ সালের ৬ই জানুয়ারি ললিত গোস্বামীর স্ত্রী গীতা গোস্বামী তার পারিবারিক পেনশন প্রদানের পুনরায় বিবেচনার জন্য আরো একটি আবেদনপত্র দাখিল করেন। কিন্তু যুক্তিসঙ্গত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও কোনো রকম সদোত্তর না পাওয়ায়, বৃদ্ধা প্রবীনা  গীতা গোস্বামী ২০২৫ সালের বাইশে এপ্রিল  ত্রিপুরা হাই কোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন।  চলতি বছরের ১ মে  মাননীয় বিচারপতি  অমরনাথ গৌড়  মামলাটি শুনানী ক্রমে, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক উদয়পুর শাখার ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে   ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি  আবেদনকারিণীর আবেদন অনুসারে রায় দানের কপি পাওয়ার ১ মাসের মধ্যে পারিবারিক পেনশন দিয়ে দেওয়ার জন্য আদেশ দেন, প্রয়োজনে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আবেদনকারিণী থেকে বন্ড ও রাখতে পারেন।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিষ্ঠুর আচরণ, গাফিলতির ও অজ্ঞতার কারণে দুর্মূল্যের বাজারে প্রায় দীর্ঘ ৩ বৎসর যাবৎ অসহায় বৃদ্ধা বিধবা মহিলা গীতা গোস্বামী তার ন্যায্য পারিবারিক পেনশন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে দিয়ে দিন যাপন করছিলেন। অবশেষে হাইকোর্টের রায়ে তিনি স্বস্তি পেলেন।

বিধবা গীতা গোস্বামীর তরফে মামলাটি পরিচালনা করেন  আইনজীবী প্রশান্ত কুমার পাল এবং অমিত বরণ সরকার, সুবীর বৈদ্য, সৌগত দত্ত, হীরালাল দেববর্মা, মৈত্রী মজুমদার, মধুরিমা চন্দ, অভিনন্দন পাল ।