
নিজস্ব প্রতিনিধি:- দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেন এবং এত সহজে দেশ ছেড়ে চলে গেলেন। ঘটনাটি অত্যন্ত রহস্যজনক। এর পেছনে কী কোন ষড়যন্ত্র রয়েছে? নাকি কোন বিদেশী শক্তির ঔপনিবেশ তৈরি করার বিশেষ চক্রান্ত? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং পদত্যাগের পর পরই তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্লেষণের প্রয়োজন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল। কারণ ২০০৬ সালের পর থেকে টানা চারবার প্রধানমন্ত্রীর কুর্শিতে বসেছিলেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের আম নাগরিকদের কাছে জাতির মুক্তিদাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা হিসেবে, এবং বর্তমান সময়েও একজন যোগ্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু নেপথ্যে কী এমন ঘটনা ঘটলো, যাতে তাকে পদত্যাগ করার পর পরই দেশ ছাড়তে হল। আবারো তিনি দেশে ফিরতে পারবেন কিনা এই বিষয়টি নিশ্চিত নয়। কিন্তু যেভাবে একটি আলটপকা অভ্যুত্থানের নাম দিয়ে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে, সে বিষয়টি কিন্তু জন্ম দিয়েছে বেশ কিছু রহস্য। তিনি দেশ ছেড়ে দিয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত ভারতে অবস্থান করছেন সূত্রের খবর এটাই। এবার ভারত তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে না অন্য কোন দেশ তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে সে বিষয়টি পরিষ্কার হতে আরও বেশ কিছু সময় কেটে যাবে। বন্ধু রাষ্ট্র ভারত তাকে আশ্রয় দেবে কিনা সেটা বিচার করার ভার তিনি ভারত সরকারের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। তাই ভারতের মনোভাব বোঝার জন্য তিনি ভারতের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চাননি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যতবার রাজনৈতিক ক্ষমতার হাত বদল হয়েছে সেগুলি সবই ছিল সেনা অভ্যুত্থান। শেখ মুজিবর হত্যাকান্ড, এরপর জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল পরবর্তী সময় তাকে হটিয়ে আবার এরশাদের ক্ষমতা দখলের ঘটনা গুলোতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সেনা অভ্যুত্থানের ইতিহাসই বিবৃত হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের পেছনে সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে না। একটি গোবেচারা আন্দোলনকে মহিরুহের পরিণত করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। এর পেছনে কার হাত রয়েছে, ভারত,আমেরিকা, চীন, না অন্য কোন দেশ..! এখানে একটা বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া দরকার বৈদেশিক সম্পর্ক অনুযায়ী চীনের সাথে ভারতের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায় হলেও, ভারতের সাথে, বাংলাদেশ বা শেখ হাসিনার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। যার কারনে মোদি মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি অতিথি হিসেবে আপ্যায়িত ছিলেন। অপরদিকে চীনের টাকায় বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে সে বিষয়টাও অস্বীকার করা যায় না। তাই ভারত এবং চীন শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, সেটা মানতে কষ্ট হয়। কারণ চীন এবং ভারত এখন বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে বহিঃর্বিশ্বে বিবেচিত। আর তার প্রমান নিজেও দিয়েছেন শেখ হাসিনা। মোদি মন্ত্রিসভার শপথের পরে তিনি উড়ে গিয়েছিলেন চীনে। সেখানে তিনি বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য চীনের সাহায্য চেয়েছেন। তাই আপাতত: দৃষ্টিতে ভারত এবং চীন শেখ হাসিনা সরকারের শত্রু ছিল না। বাকি রইল আমেরিকা, আমেরিকা কিন্তু বাংলাদেশকে কবজা করতে, বহুদিন ধরে এই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আমেরিকা জলপথে নজরদারির জন্য ঔপনিবেশ স্থাপিত করে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে খবরদারি করার পরিকল্পনা নিয়েছে বহুদিন ধরেই। কিন্তু হাসিনা সরকারের অপছন্দ ছিল আমেরিকার তাবেদারি। তাই হঠাৎ করে বাংলাদেশের ছাত্র অভ্যুত্থান বিষয়টির পেছনে বিদেশি শক্তির গভীর পরিকল্পনা রয়েছে সেটাই প্রতীয়মান। এবার আসা যাক, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়গুলোতে। চীন এবং ভারত দুই দেশেরই সিক্রেট গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশের সক্রিয় রয়েছে। সেটা অবশ্য নতুন করে নয় বহুদিন ধরেই ভারতের "র" বাংলাদেশের মাটিতে কাজ করছে। যে কারণে মুজিবর রহমান হত্যাকান্ডের আগেই," র"বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু সেই "র" এবার বাংলাদেশে ব্যর্থ। তাই এত বড় চক্রান্ত চলছে সে বিষয়টিতে ভারত শেখ হাসিনাকে সতর্ক করতে পারেনি। একই দোষে দোষী চীনের গোয়েন্দা সংস্থাও। কিন্তু এই ধরনের অভ্যুত্থান ভারতের সামনেও কিন্তু অশনি সংকেত। ভারতকে ঘিরে আশেপাশের রাষ্ট্রগুলোর বর্তমান পরিস্থিতির দিকে নজর ফেরালেই সেটা প্রতীয়মান হয়। আফগানিস্তান, মায়নমার, শ্রীলংকা, এবং বাংলাদেশের ঘটনা প্রমাণ করে দিচ্ছে ভারতকে ঘিরে বহিঃবিশ্বে একটা বড় ধরনের চক্রান্ত রচিত হচ্ছে। সম্প্রতি নেপালের ক্ষমতার হাত বদলও কিন্তু সেটারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে এখনই ভারতের চিন্তা করা উচিত বলে মনে করছেন একাংশ মহল। কারণ শেখ হাসিনার যে সেনাবাহিনীর উপর ভরসা করে ছাত্র আন্দোলন স্থিমিত করার চেষ্টা করেছিলেন, সেই সেনাবাহিনী শেষ মুহূর্তে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এক কথায় চতুর্থবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকেই, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত শুরু হয়ে যায়। তাই হাইকোর্টের নির্দেশে যেখানে ৫৬ পার্সেন্ট কোটা বাংলাদেশে লাগু হয়েছিল, সেটাকে ভিত্তি করে একটা সরকারের বিরুদ্ধে এত বড় আন্দোলন তৈরি করা বিদেশি শক্তির সাহায্য ছাড়া হতেই পারে না। এক্ষেত্রে সরকারের কতটুকু দোষ ছিল সেটা এখন বিচার্য নয়, কারণ বাংলাদেশ হাইকোর্টের নির্দেশ প্রয়োগ করেছিল বাংলাদেশ সরকার। এক্ষেত্রে সরকারকে টার্গেট করে কোটা বিরোধী আন্দোলন অনেকটাই বেমানান। সে ক্ষেত্রে জনস্বার্থ মামলা হতে পারতো সুপ্রিম কোর্টে। যদিও পরবর্তী সময় এই কোটা তুলে দেওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলে, কিন্তু ততক্ষণে ষড়যন্ত্রীদের বিদ্বেষ বীজ ছাত্র সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট যখন, কোটা সংরক্ষণের বিষয়টিতে মাত্র পাঁচ শতাংশ সংরক্ষণ করা যাবে ঘোষণা দেয়। এটা মেনেও নেয় হাসিনা সরকার। এরপর আন্দোলন যখন স্থিমিত হবার পথে, সে সময় আবার এই আন্দোলনকে নতুন করে ইন্ধন যুগিয়েছে একাংশ বিদেশি ষড়যন্ত্রীরা। এরা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিকাঠামোকে আগে ধ্বংস করেছে এরপর আন্দোলনের নামে মাঠে নেমেছে। হাসিনা সরকার কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নিয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারের নামে পরিকল্পিতভাবে এরপরই হাসিনাকে পদচ্যুত করার জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের নামে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়, আর তার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের মাধ্যমে। এই ঘটনায় তিনটি বিষয় পরিষ্কার। আর এগুলো হল,পুরো ঘটনায় রয়েছে বিদেশি শক্তির স্বার্থান্বেষী ইন্ধন, এবং নিকৃষ্ট পরিকল্পনা।ভারত এবং চীনের গোয়েন্দা সংস্থা সম্পূর্ণ ব্যর্থ যা আগামী দিনে ভারতের জন্য হুমকি।ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিকাঠামোকে গুড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা এবং ভারতকে ঘিরে অস্থির বাতাবরণ তৈরি করা।