
ত্রিপুরা পুলিশে কর্মরত এক মহিলা কনস্টেবলকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হল আগরতলা পশ্চিম মহিলা থানায়। অভিযুক্ত হলো টিএসআর বাহিনীর এক রাইফেলম্যান। অভিযুক্ত এই রাইফেলম্যানের নাম প্রণব বিশ্বাস। তার বাড়ি দক্ষিণ জেলার বাইখোড়া থানা এলাকার দেবদারু বাঙ্গালী পাড়ায়।
ত্রিপুরা পুলিশে কর্মরত এক মহিলা কনস্টেবলকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হল আগরতলা পশ্চিম মহিলা থানায়। অভিযুক্ত হলো টিএসআর বাহিনীর এক রাইফেলম্যান। অভিযুক্ত এই রাইফেলম্যানের নাম প্রণব বিশ্বাস। তার বাড়ি দক্ষিণ জেলার বাইখোড়া থানা এলাকার দেবদারু বাঙ্গালী পাড়ায়। বর্তমানে সে রয়েছে অধীর ধর পাড়া, এসএসবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকার। এডি নগর ড্রপ গেইট কোয়ার্টার কমপ্লেক্স এলাকার বাসিন্দা নির্যাতিতা মহিলা পুলিশ কর্মী গায়ত্রী দাসের অভিযোগ ২০২১ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে তার সাথে পরিচয় হয়েছিল প্রনব বিশ্বাসের। পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রণব বিশ্বাস গায়ত্রী দাসের সাথে ফেসবুকে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় এবং ফোন নাম্বার আদান প্রদান করে। ধীরে ধীরে তাদের পরিচয় আরো গাঢ়ো হয় এবং মোবাইলে মেসেজ এবং কথাবার্তা চলতে থাকে। এক সময় দুজনেই দুজনের কথাবার্তায় প্রভাবিত হয়ে সামনাসামনি সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে দুজনের সিদ্ধান্ত ক্রমে ২০২১ সালের জুলাই মাসে প্রণব বিশ্বাসকে নিয়ে গায়ত্রী দেবী তার ছোট ভাইয়ের তেলিয়ামুড়া ভাড়া বাড়িতে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ভাইয়ের বাড়িতেই গায়ত্রী দাস প্রথমবারের মতো দেখেন টিএসআর জওয়ান প্রণব বিশ্বাসকে। সেখানে প্রণব বিশ্বাস পরিচিত হন গায়ত্রী দাসের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথেও। নিজেকে টিএসআর জওয়ান হিসেবে দাবি করে প্রণব বিশ্বাস গায়ত্রী দাসের পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করলেও তিনি বিবাহিত এই বিষয়ে কোন কথাই সে কাউকে বলেনি। বরং সেসময় সে নিজেকে অবিবাহিত বলে দাবি করে। বাড়ির লোকেরা তার জন্য মেয়ে দেখছেন বলে জানায় প্রণব। তেলিয়ামুড়ায় ভাইয়ের বাড়িতে গায়ত্রী দাস এবং প্রণব বিশ্বাস দুজনের প্রথম সাক্ষাতের পরের দিনই প্রণব বিশ্বাস গায়ত্রী দাসকে এডি নগর যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। সে প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান গায়ত্রী দেবী। ২০২১ সালের ১৮ জুলাই দুজনেই আসেন এডি নগরে। পরে কথায় ভুলিয়ে প্রণব বিশ্বাস গায়ত্রী দেবীর কোয়ার্টার দেখতে চান। ভদ্রতা এবং সৌজন্যতার খাতিরে তাকে নিজের কোয়ার্টারে নিয়ে আসেন গায়ত্রী দাস। কোয়ার্টারে এসেই নিজের রূপ প্রকাশ করে প্রণব। বাড়ির অন্য সদস্যদের অনুপস্থিতিতে একপ্রকার জোর করেই সে ধর্ষণ করে গায়ত্রী দেবীকে। গায়ত্রী দেবীর দাবি অনুযায়ী আচমকা এভাবে ধর্ষিতা হয়ে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু অভিযুক্ত প্রণব সে সময় আশ্বাস দেয় সে গায়ত্রীকে বিয়ে করবে। এই ঘটনার পর প্রায় প্রণব গায়ত্রীর কোয়ার্টারে আসতো এবং শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করতো। গায়েত্রী দাসের অভিযোগ অভিযুক্ত প্রণব বিশ্বাস শুধু তাকে শারীরিকভাবে শোষন করেই ক্ষ্যান্ত থাকেনি, সে দিনের পর দিন বিভিন্ন অজুহাতে গায়েত্রী দেবীর কাছ থেকে টাকা নিতেও শুরু করে। ইতিমধ্যেই প্রণব বিশ্বাস তার কাছ থেকে কুড়ি লক্ষ টাকা বিভিন্ন সময় হাতিয়ে নিয়েছে বলে গায়ত্রী দাসের অভিযোগ। তার টাকার খাই মেটাতে আগরতলা ইন্দ্রনগরের একটি জমি এবং জিপিএফ থেকেও টাকা তুলে সে টাকা তিনি প্রণবকে দিয়েছেন বলে দাবি করলেন গায়ত্রী দাস। কিন্তু বিয়ের কথা বললেই প্রণব নানা অজুহাতে পিছিয়ে যেত বলে দাবি গায়ত্রীর। ইতিমধ্যেই গায়েত্রী দেবী উত্তর জেলার কদমতলা থানায় পোস্টিং হয়েছেন। সেখানেও প্রণব আনাগোনা শুরু করে বলে জানান গায়েত্রী দেবী। এরকম অবস্থায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে গায়ত্রী দাস প্রথম জানতে পারেন, প্রণব বিশ্বাস বিবাহিত পুরুষ এবং তার একটি পুত্র সন্তানও আছে। দিনের পর দিন সম্পূর্ন মিথ্যা কথা বলে এবং বিয়ের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গায়েত্রী দেবীর সাথে সে শুধুমাত্র তার শারীরিক চাহিদা মিটিয়েছে বলে দাবি করলেন গায়ত্রী দেবী। এই বিষয়ে প্রণব বিশ্বাসের কাছে জবাবদিহি চাইতেই সে ভয় দেখাতে শুরু করে তার কাছে নাকি গায়েত্রী দাসের প্রচুর অশ্লীল ভিডিও ছবি আছে। তার কথা মতো না চললে সে এই ভিডিওগুলো সোশ্যাল মিডয়াতে ছেড়ে গায়ত্রী দেবীর বদনাম করবে। গায়েত্রী দেবীর দাবি এরপর তিনি আরো মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে লোক লজ্জার ভয়ে অভিযুক্ত প্রনব বিশ্বাসের কথামত চলতে শুরু করেন। এই সুযোগ নিয়ে প্রণব বিশ্বাস গায়ত্রী দেবীকে মারধোরও শুরু করেন বলে অভিযোগ। মান সম্মানের ভয়ে এই বিষয়গুলো এতদিন ধরে প্রকাশ্যে আনতে পারেননি গায়ত্রী দাস। কিন্তু দিন দিন প্রণবের চাহিদা ও অত্যাচার বেড়েই চলছিল। তাছাড়া অভিযুক্ত ব্যাক্তি প্রনব বিশ্বাস ইদানিং গায়ত্রী দেবীকে গুলি করে খুনেরও হুমকি দিতে শুরু করে। এদিকে গায়ত্রী দাসের সাথে প্রণবের অবৈধ সম্পর্কের বিষয়ে জানতে পারে প্রণব বিশ্বাসের স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যান্য লোকজনরাও। গায়ত্রী দাসের দাবি অনুযায়ী তারপর থেকেই রাইফেল ম্যান বিশ্বাসের স্ত্রী এবং তার পরিবারের লোকজনরাও তাকে হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করে। ফলে তিনি বর্তমান সময়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রতিনিয়ত অত্যাচারিত হচ্ছেন বলে দাবি করলেন। আর এই অত্যাচার থেকে বাঁচতেই শেষ পর্যন্ত গায়ত্রী দাস ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতের মাধ্যমে প্রণব বিশ্বাসের কাছে আইনি নোটিশ পাঠান। তবে আদালত থেকে এই ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি। এমতাবস্থায় চলতি বছরের ৫ এপ্রিল অভিযুক্ত প্রনব বিশ্বাস রাতে গায়ত্রী দেবীর এডি নগরস্থিত পুলিশ কোয়ার্টারে আসেন এই ঘটনাগুলোর সমাধান করবে বলে। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যাক্তি ওই রাতেও ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে গায়ত্রী দেবীর সাথে। নির্যাতিতা গায়ত্রী দেবীর দাবি অনুযায়ী এই ঘটনার পরের সকালেই নাকি প্রণব বিশ্বাস পরিষ্কার জানিয়ে দেয় সে কোনভাবেই গায়ত্রী দেবীকে বিয়ে করবে না। এরপরও বর্তমান সময়ে প্রণব এবং তার পরিবারের একাধিক সদস্যরা দিনের পর দিন ভয়ভীতি এবং হুমকি প্রদর্শন করার পাশাপাশি তাকে প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে। যার ফলে গায়ত্রী দেবীর দাবি তিনি বর্তমানে ভীত এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত । পাশাপাশি তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং তার জীবন জীবিকার উপর আক্রমনের আশঙ্কা করছেন। ফলে তিনি এবার বাধ্য হয়েই থানায় এজাহার করেছেন বলে জানিয়েছেন।