
২১ দফা দাবি আদায়ে হাতাইকতরের পাদদেশে সাধুপাড়ায় আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের
জাতীয় সড়ক অবরোধ। দাবি মানা না হলে এই ২৪ ঘন্টার পথ অবরোধ অনির্দিষ্টকালের জন্য হবে বলে এদিন দাবি করলেন টিইউআইআরপিসি'র নেতৃত্ব।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার ২১ দফা দাবিতে মঙ্গলবার আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করে দিল টিইউআইআরপিসি।
ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পরেও ২১ দফা দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধের জন্য আত্মসমর্পণকারী বৈরী সংগঠন ত্রিপুরা ইউনাইটেড ইন্ডিজেনাস রিটার্নিস পিপলস কাউন্সিলের সদস্যরা সোমবার বিকাল থেকেই বড়মুড়া এলাকায় জড়ো হতে শুরু করে। সারারাত সেখানে অবস্থান করে তারা এদিন সকাল ছয়টা থেকে তাদের অবরোধ আন্দোলন শুরু করে।
টিইউআইআরপিসি'র সভাপতি ডানিয়েল দেববর্মা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়ায় আত্মসমর্পণকারী বৈরীরা পঞ্চম বারের মত জাতীয় সড়ক অবরোধে বসতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা ও সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে বহুবার আলোচনার পরেও এখনও পর্যন্ত তাদের দাবি পূরণ করা হয়নি।এই অবরোধ আগামী ২৪ ঘণ্টা ধরে চলবে। দাবি পূরণ না হলে এই অবরোধ আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের জন্য রূপান্তরিত হবে। তবে, ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পরেও সংগঠনের সদস্যদের এমন আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এদিকে এই অবরোধ নিয়ে যাতে কোন ধরনের ঝামেলা সৃষ্টি না হয় তার জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের তরফে হাতাইকতর সাধুপাড়া এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিরা তাদের পরিবার-পরিজনদের নিয়ে অবরোধস্থলে এসে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। বেশ কয়েকটি টেন্ট অবরোধ স্থলের আশেপাশে তৈরি করা হয়েছে। আত্মসমর্পণকারী জঙ্গি নেতা ডানিয়াল দেববর্মা জানিয়েছেন, ত্রিপাক্ষিক শান্তি চুক্তি হয়েছে, কিন্তু চুক্তির শর্ত মানা হচ্ছে না। যার কারণে বিভিন্ন সময়ে আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিরা তাদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত। অনেকের বিরুদ্ধে এখনো মামলা রয়েছে। যার কারণে তাদের নিয়মিত বিভিন্ন থানায় ও কোর্টে হাজিরা দিতে হচ্ছে। পাট্টার কাগজ অনেককেই প্রদান করা হয়নি। সরকার ঘোষিত আর্থিক প্যাকেজ থেকে বঞ্চিত প্রায় প্রত্যেক আত্মসমর্পণকারী। এমনকি আত্মসমর্পণকারী জঙ্গি হিসেবে অনেককে এখন পর্যন্ত আইডেন্টিটি কার্ড প্রদান করা হয়নি। তাছাড়া আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের যেখানে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, পানীয় জলের ব্যবস্থা ইত্যাদি সঠিকভাবে করা হয়নি। ডানিয়াল দেববর্মার দাবি জনজাতি অংশের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ দিতে হবে। তাছাড়া রোমান হরফে ককবরক লিপি নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তারও অবসান চাইছেন তিনি। তিনি জানান আত্মসমর্পণকারী জঙ্গি হিসেবে সবাইকে যাতে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা গুলি দেওয়া হয় তার জন্য রাজ্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রীর সাথে একাধিকবার আলাপ আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিক্ষেত্রেই তাদের দাবি পূরণ করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর পুনর্বাসন সঠিকভাবে দেওয়া হয়নি। যার কারনে দুর্ভোগে ভুগছেন আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিরা। অনেকেরই রুজি রোজগার বন্ধ। এমতাবস্থায় নিজেদের প্রাপ্য আদায়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ ছাড়া তাদের কাছে আর বিকল্প রাস্তা নেই। তাদের আশা ২৪ ঘন্টা জাতীয় সড়ক অবরোধের পর সরকার আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের জন্য নতুন করে চিন্তা ভাবনা শুরু করবে। দাবি না মানা হলে আত্মসমর্পণকারীদের পথ অবরোধ আন্দোলন আরো বড় আকার ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন ডানিয়েল দেববর্মা।