ত্রিপুরা খবর
img

আগরতলায় জমে উঠেছে কেকের বাজার

নিজস্ব প্রতিনিধি:- ডিসেম্বর মানেই বড়দিনের উৎসব মাস। বড়দিন এখন আর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তাই গোটা ভারত তো বটেই ত্রিপুরা বিশেষ করে রাজধানী আগরতলাতেও জাতি বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে ২৫ ডিসেম্বর দিনটিতে বড়দিনের আনন্দে মেতে উঠেন। যদিও উৎসবের শুরুয়াদ হয়ে যায় ২৪ ডিসেম্বর রাত বারোটার পর থেকেই। ফলে বড়দিনকে নিয়ে প্রত্যেকের মধ্যে আলাদা একটা অনুভুতি। বিশেষ করে, ২৫ ডিসেম্বর, বড়দিনকে ঘিরে উৎসবের মেজাজ দেখা গেল এদিন রাজধানীতে। সন্ধ্যার সাথে সাথেই মানুষজন বেরিয়ে গেছেন শহরে। আগরতলা শহরের বড় বড় কেক তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্ধ্যার পর থেকে দেখা গেল যথেষ্ট ভিড়। ফ্যাক্টরি গুলোতে কেক তৈরি করার প্রস্তুতি আরো দু একদিন আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। আগরতলা শহরের বনেদি কেকের দোকানগুলো  রবিবার থেকেই রকমারি কেক সাজিয়ে খদ্দেরের আশায় বসে ছিল। কিন্তু ২৪ তারিখ দুপুরের পরও সেরকম ভাবে কেকের বিক্রি ছিলনা। তবে বিকেল হতেই বনেদি কেকের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়তে শুরু করে এবং বিক্রি শুরু হয়। বনেদি কেকের দোকানের পরিচালকদের আশা বিগত বছর গুলোর মতই এ বছরও কেক বিক্রিবাটা  হবে। এক্ষেত্রে ২৫ ডিসেম্বরে কেকের বিক্রি সবথেকে বেশি হবে বলে জানিয়েছেন ফ্যাক্টরির কারিগর এবং সেলসম্যানরা। যদিও এ বছর কেকের দাম কিছুটা বেশি হবে বলে তাদের ধারণা। কারণ সম্প্রতি বেকারির সব সামগ্রীর  দাম বেড়েছে। ফলে এবছর কেকের পেছনে একটু বেশিই খরচ হবে। যদিও কেক কেনাতে  আগ্রহের কোন ঘাটতি নেই। তাই এক কথায় বলা যায় আগরতলা তথা ত্রিপুরাবাসী মঙ্গলবার থেকেই ক্রিসমাস ডে পালনের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। প্রসঙ্গত,দ্য অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি অনুযায়ী, কেক কথাটির খোঁজ মিলছে ১৩ শতকে। প্রাচীন নোরস বা স্ক্যান্ডেনেভিয়ান শব্দ 'কাকা' থেকেই নাকি এসেছে কেক কথাটি। তবে সেই কেকের থেকে আজকের কেক পুরোপুরি আলাদা। তখন কেক ছিল মূলত পাউরুটি। তার স্বাদ মিষ্টি করা হত মধু দিয়ে। কখনও কখনও থাকত বাদাম ও কিসমিস, তাছাড়া থাকতো আরো নানা কিসিমের শুকনো ফল। মধ্যযুগে ইউরোপের বেকারিগুলিতে মাঝে মাঝে ফ্রুটকেক ও জিঞ্জারব্রেড বানানো হত। সে সব কেক কয়েক মাসেও নষ্ট হত না।ক্যালেন্ডারে ক্রিসমাস বা বড় দিনের কেকের একটা আলাদা অবস্থান রয়েছে। ইতিহাস বলছে, ৩৩৬ সালে রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের আমলে প্রথম ক্রিসমাস অর্থাৎ বড়দিন পালন করা হয়। ক্রিসমাসে কেক খাওয়ার রীতি অবশ্য শুরু হয় তারও অনেক পরে। ক্রিসমাসে কেক বানানো ও খাওয়ার ট্রাডিশনটা ইংরেজদের। তবে ক্রিসমাস পালন যখন শুরু হয় তখন তখন কেক ছিল না, ছিল প্লাম পরিজ। সেই সময় ক্রিসমাসের আগের দিন উপবাস করার নিয়ম ছিল। একদিন উপবাসের পরে বড়দিনের ঠিক আগে ইংরেজরা উপবাস ভাঙতেন পরিজ খেয়ে। কারণ বেশ কয়েক ঘন্টা খালি পেটের পর ভারি খাবার পেটে পড়লে শরীর খারাপ হতে পারে কিন্তু পরিজ খেলে সেটা হবে না। সেই রীতি চলে বেশ কিছু কাল। এরপর পরিজের মিশ্রণে শুকনো ফল, মশলা ও মধু মিশিয়ে সেটি ক্রিসমাস পুডিংয়ের আকার নেয়।১৬ শতকে ক্রিসমাসের কেক বা পুডিঙের রেসিপি থেকে ওটমিল বাদ যায়, তার পরিবর্তে মাখন, ময়দা ও ডিম যোগ হয়। এই উপকরণগুলি যোগ হওয়াতে পরবর্তীতে প্লাম কেক তৈরি করা সহজ হয়ে যায়। এরপরে যে সব পরিবারে ওভেন ছিল, তারা ইস্টারের জন্য মারজিপ্যান বা অ্যালমন্ড সুগার পেস্ট ব্যবহার করে ফ্রুট কেক তৈরি করতে শুরু করে। আর বড়দিনের আগে শুকনো ফল ও মশলা ব্যবহার করে কেক। এই কেকগুলিই কালক্রমে ক্রিসমাস কেক নামে পরিচিতি পায়। এর পর কেক সংস্কৃতিতে যোগ হয় কেক মিক্সিং পর্ব। কেক মিক্সিং মানে আসন্ন বড়দিন উদ্‌যাপনের মুখড়া বলে ধরা যেতে পারে। পুজোর সময় যেমন কাঠামো পুজো প্রতিমা তৈরি করা, তেমনই বড়দিন ও কেক প্রায় সমার্থক। প্রকাণ্ড ক্রিসমাস কেক এবং পুডিংয়ের নানা রকমের ফল, বাদাম, মোরব্বা ডাঁই করার প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে শুরু হয় খ্রিস্ট বরণের উৎসব।  মাস দু’য়েক ধরে মজানো হয় ক্রিসমাস কেক বা পুডিংয়ের  সব উপকরণ। এরপর বড়দিনের এক দুদিন আগে থেকে তৈরি হয় কেক তৈরির প্রক্রিয়া। যদিও সারা বছরই কেক তৈরি হয়। কিন্তু বড়দিনের সময় কেক যেন এক আলাদা মাত্রা পায় সমাজের সব অংশের মানুষের কাছে। যে কোনদিন কেক মুখে তুলে না, ওই ব্যক্তিও এই দিনটিতে এক টুকরো কেক মুখে দিতে আপত্তি করেন না। তাই বলা যেতে পারে  বড়দিন শুধু এখন খ্রিস্টানদের উৎসব নয়, হিন্দু, মুসলিম প্রত্যেকের কাছেই এক আনন্দ উৎসব।