ত্রিপুরা
img

সাক্ষরতা হলো নতুন জীবনের দরজা খোলার চাবিকাঠি: মুখ্যমন্ত্রী

মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা সোমবার  ত্রিপুরাকে পূর্ণ সাক্ষর রাজা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। উল্লাস-নব ভারত সাক্ষরতা কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ত্রিপুরা  পূর্ণ সাক্ষর রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে। এদিন আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে এই উপলক্ষ্যে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের রাজা সাক্ষরতা মিশন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এক বর্ণময় সমারোহে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘোষণা দেন।

 

মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা সোমবার  ত্রিপুরাকে পূর্ণ সাক্ষর রাজা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। উল্লাস-নব ভারত সাক্ষরতা কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ত্রিপুরা  পূর্ণ সাক্ষর রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে। এদিন আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে এই উপলক্ষ্যে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের রাজা সাক্ষরতা মিশন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এক বর্ণময় সমারোহে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘোষণা দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন,  রাজোর জন্য এক ঐঐতিহাসিক মুহূর্ত। মিজোরাম এবং গোয়ার পর ত্রিপুরা আজ দেশের তৃতীয় রাজা হিসেবে পূর্ণ সাক্ষরতার মর্যাদায় ভূষিত হয়েছে। তার আগে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে লাদাখ এই সাফল্য অর্জন করেছে। এই সাফল্য নিসন্দেহে রাজ্যের জন্য অত্যান্ত গর্বের এবং, এটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবকা সাঘ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রয়াস এই দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তা আজ পরিলক্ষিত হচ্ছে। রাজ্যে উল্লাস-নব ভারত সাক্ষরতা কর্মসূচিতে ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের অসাক্ষর নাগরিকদের সাক্ষর করে তোলার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক সহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী যারা এই অভিযানকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন তাদের মুখ্যমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান। প্রত্যেকেই কোনও পারিশ্রমিক বা স্বার্থ ছাড়াই সমাজের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে এই মহাযজ্ঞকে সফল করেছেন। ওরা প্রত্যেকেই আমাদের সাক্ষরতার সৈনিক। পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রককেও এক্ষেত্রে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই অভিযানটি একটি সাধারণ প্রকল্প নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। ১৮৬১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী ত্রিপুরায় সাক্ষরতার হার ছিলো ২০২৪ শতাংশ। ১৯৯১ সালে তা হয় ৬০.৪৪ শতাংশ। ২০০১ সালে ৭৩১৯ শতাংশ এবং ২০১১ সালে ৮৭,২২ শতাংশে পৌঁছায়। ২০২২ সালের পয়লা আগস্ট চালু উল্লাস-নব ভারত সাক্ষরতা কর্মসূচির কার্যকর প্রয়াসের ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে অনুযায়ী সক্ষরতার হার দাঁড়ায় ৯৩.৭ শতাংশ। যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ১৫.৬ শতাংশে পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে তিনবার ফাউন্ডেশন লিটারেসি আঅ্যান্ড নিউমারেসি আসেসমেন্ট টেস্ট (এসএলএনএটি) নেওয়া হয়েছে। এতে প্রথমবার ২০২৪ সালের ১৭ মার্চ এফ.এলএনএটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৫৫৯৭ জনের মধ্যে ৩ হাজার ৫৫৮/১ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। ২০২৪ সালের • ডিসেম্বর ১৯,১৭৯ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। যাদের মধো ১৩,১০১ জন উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ২০২৫ সালের ২৩ মার্চ এফ. এলএনএটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৫.৮১৬ জনের মধো ৫,৮১৯ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দৃষ্টিভঙ্গি ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ার ক্ষেত্রে সাক্ষরতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ২১ জুলাই দিল্লিতে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০’র তৃতীয় বার্ষিকী অনুষ্ঠানে উল্লাস-১ লোগো, জন জন সাক্ষর স্লোগান এবং মোবাইল অ্যাপের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বাস কর্মসুচির মূল ৫টি উপাদান সম্পর্কেও মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রাজো উল্লাসের মাধ্যমে প্রতিটি ব্লক ও গ্রামে গড়ে উঠেছে ৯৪৩টি সামাজিক চেতনা কেন্দ্র। শিক্ষাদানের জন্য ২ হাজার ২২৮ জন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ গানচারী, কলেজ শিক্ষার্থী ও ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখানেই থেমে থাকা আমাদের লক্ষা না। সাক্ষরতা হলো নতুন জীবনের দরজা খোলার চাবিকাঠি। আমরা চাই আমাদের নব সাক্ষর নাগরিকগণ দক্ষ, আত্মনির্ভর হোক। আজকের দিনটি একটি নতুন যাত্রার সূচনা। এটি ত্রিপুরার ইতিহাসে স্বণাক্ষরে লেখা থাকবে। রাজ্যের নাগরিকদের দক্ষতা উন্নয়নে সরকারের গৃহীত প্রকল্পগুলির কথা উল্লেখ করে মুখামন্ত্রী বলেন,  শিক্ষা দপ্তরের পাশাপাশি অন্যান্য দপ্তরগুলিকে যুক্ত করে এই মহতী উদ্যোগকে সার্থক করে তুলতে হবে।

 

এদিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা অধিকর্তা প্রীতি মিনা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মধ্যশিক্ষা ও বুনিয়াদি শিক্ষা ও সমগ্র শিক্ষার রাজা প্রকল্প অধিকর্তী এন, সি. শমী। এয়াড়াও উপস্থিত ছিলেন এসসিইআরটি’র অধিকর্তা লালনুয়েমি ভার্লং। অনুষ্ঠানে উল্লাস নব-সাক্ষর কর্মসূচির উপর একটি তথাচিত্র প্রদর্শিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগণ ‘উল্লাস’ নামক পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন করেন। এছাড়াও নব-সাক্ষরারা নাটক ও নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার নব সাক্ষরদের মধ্যে বেস্ট লার্নার-দের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। অনুষ্ঠানস্থলে প্রদর্শিত স্টলগুলির মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় এবং সাক্ষরতায় শ্রেষ্ঠত্বের নিরিখে সেরা জেলা হিসেবে উত্তর জেলাকে পুরস্কৃত করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগণ পুরস্কার প্রাপকদের হাতে পুরস্কারগুলি তুলে দেন।