
শনিবার পূর্ব চাঁদমারিতে একটি বড় কন্সট্রাকশন সাইটের বাউন্ডারির ভেতরে ডোবার জলে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ক্ষুব্ধ বড়জলা এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক ডক্টর দিলীপ দাস।ঠিকেদারি সংস্থা সহ এই কনস্ট্রাকশনের জন্য সরকারি অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে যে আধিকারিকরা রয়েছে তারাও এই মর্মান্তিক ঘটনার দায় এড়াতে পারবেন না বলে জানালেন ডক্টর দিলীপ দাসপূর্ব চানমারি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল সংলগ্ন মাঠে একটি বিশাল কন্সট্রাকশন সাইটে একই বাড়ির অপ্রাপ্ত বয়স্ক দুই ভাই বোনের কৃত্রিম তৈরি ডোবার জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এলাকায় যুগপৎ উত্তেজনা এবং শোকের ছায়া। এমতাবস্থায় সোমবার এই এলাকায় গিয়ে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সমস্ত বিষয়ে খোঁজখবর নিলেন বড়জলা এলাকার প্রাক্তনবিধায়ক ডক্টর দিলীপ দাস সহ মন্ডলের কর্মকর্তারা। কনস্ট্রাকশন সাইটে ঠিকেদারের বহু গাফিলতি নজরে পড়েছে প্রাক্তন বিধায়ক ডক্টর দিলীপ দাসের। সামগ্রিক অবস্থা দেখে তিনি অত্যন্ত ক্ষিপ্ত এবং ক্রুদ্ধ। ঠিকেদারের গাফিলতি সহ গাফিলতি গুলোর নজরদারিতে সংশ্লিষ্ট যে সরকারি লাইন ডিপার্টমেন্ট গুলো জড়িত সেই সরকারি দপ্তর গুলোর খামখেয়ালিরও তীব্র সমালোচনা করলেন ডক্টর দিলীপ দাস। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত শনিবার পূর্ব জানুয়ারি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল সংলগ্ন একটি বড় কনস্ট্রাকশন সাইটে পাইলিং এর জন্য খোঁড়া বড় গর্তের জলে ডুবে হতদরিদ্র পরিবারের দুটি শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। রবিবার এই দুটি শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার হবার পরেই গোটা আগরতলা শহরে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা মৃতের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন এবং এই পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে পরিপ্রেক্ষিতে এদিন বড়জলার প্রাক্তন বিধায়ক ডক্টর দিলীপ দাস মন্ডল সভাপতি রাজীব সাহা ও মন্ডলের অন্যান্য নেতৃত্বদের নিয়ে গঠিত একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান এবং দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর নেন। ঘটনাস্থলে সার্বিক পরিস্থিতি দেখে ক্ষুব্ধ ডক্টর দিলীপ দাস। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তা ওই দরিদ্র পরিবারটির জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক। এক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা কখনো ঘটতে পারে স্থানীয় মানুষদের কল্পনার বাইরে ছিল। বিভিন্ন গাফিলতির জন্য এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করলেন দিলীপ দাস। সাংবাদিকদের সামনে তিনি একাধিক সরকারি দপ্তর গুলোরউদাসীনতার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি জানান, বড় বড় কনস্ট্রাকশনের ক্ষেত্রে ঠিকেদারকেই দায়িত্ব দেওয়া হয় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য। সেটা সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি দুটি ক্ষেত্রে ঠিকেদাররা নির্মাণ করেন এবং এর তদারকির দায়িত্বে থাকেন ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল সংলগ্ন মাঠটিতে যে কনস্ট্রাকশন হচ্ছিল সেই নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্ব থাকা ইঞ্জিনিয়ার তার দায়িত্ব পালনে গাফিলতি দেখিয়েছেন। কি কারনে এত বড় গর্ত এই কনস্ট্রাকশন সাইটে করা হয়েছিল সে ব্যাপারটাও তিনি বুঝতে পারছেন না। প্রয়োজনে যদি গর্ত করতেই হতো সেটি কেন প্রয়োজন শেষ হয়ে যাবার পর বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হলো না, তিনি এই প্রশ্ন তুলেছেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, এই কনস্ট্রাকশন সাইটে বেআইনিভাবে হুক লাইনে বিদ্যুৎ নামানো হয়েছে। পুরো কনস্ট্রাকশন সাইটে বিপজ্জনকভাবে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে রয়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে। যে ইলেকট্রিক পোস্ট থেকে হুক লাইন টানা হয়েছে সেখানে আজকের দিনেও ক্রমাগত স্পার্কিং হচ্ছে। এ বিষয়টিতে নজর দেওয়া উচিত ছিল বিদ্যুৎ নিগমের। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ নিগমের অধিকর্তাদের কাছে জবাবদিহি চাওয়া হবে বলে জানালেন ডক্টর দিলীপ দাস। পুলিশকেও ডেকে এ বিষয়টি দেখানো হয়েছে। এই কনস্ট্রাকশন সাইটে আগেও বেশ কয়েকটি অঘটন ঘটেছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুটো গরু মারা গেছে বলে জানা গেছে। তারপরেও ঠিকাদার কোন ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করেনি বলে অভিযোগ করলেন প্রাক্তন বিধায়ক। সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেননি। যার কারণে ডোবার মত বড় গর্তটিকে ঘিরে বেড়ার প্রোটেকশন দেওয়া হয়নি। উল্টে দেখা গেছে এই বড় ডোবায় পড়ে দুটি শিশুর মৃত্যুর পর মুখ্যমন্ত্রীর নজরে যখন ঘটনাটি এসেছে তখন নিজেদের দোষ ঢাকতে ডোবাটিকে বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন সংশ্লিষ্ট কাজের দেখভালের দায়িত্ব থাকা ইঞ্জিনিয়ার। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি নিয়ে আগরতলা পুর নিগমের ওই এলাকার বিভাগীয় আধিকারিকদের খোঁজখবর নেওয়া প্রয়োজন ছিল কিন্তু সেখানেও পুর নিগমের গাফিলতি রয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তর গুলোর কর্মীরা দায়বদ্ধতা হারিয়ে ফেলেছেন বলেই এই ধরনের ঘটনা ঘটে গেছে। দুটি শিশুর প্রাণের বিনিময়ে এই বিষয়টি বে-আব্রু হয়েছে। যখনই বড় কোন ধরনের কনস্ট্রাকশন হয়, সেই কনস্ট্রাকশন করার জন্য সরকারি দপ্তর গুলো কিছু অনুমতি দেয়। অনুমতির শর্তগুলো ঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোর। এত রক্ত আধিকারিকরা তাদের দায়িত্ব পালন করেনি বলেই অনভিপ্রেত দুটি শিশুর মৃত্যুর ঘটেছে। বাচ্চাকে এখনই শিক্ষা নেওয়া দরকার বলে মনে করছেন ডক্টর দিলীপ দাস। এক্ষেত্রে মৃত শিশুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ অবশ্যই দিতে হবে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটিকে এবং ঠিকাদারকে বলে দাবি করলেন প্রাক্তন বিধায়ক।