ত্রিপুরা
img

বামুটিয়ার গোমতী ডেয়ারির দ্বিতীয় ইউনিটটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে : মুখ্যমন্ত্রী

মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শনিবার বামুটিয়াতে উদ্বোধন হল গোমতী ডেয়ারির দ্বিতীয়  ইউনিট। রাজ্যের উন্নয়নের মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হয়েছে দাবী করে এই ইউনিটটি স্থাপনের ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি হবে বলে দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা
গো-পালকদের আর্থিক সমৃদ্ধি তথা আয়কে দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়ে  প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদির দিকনির্দেশনা বামুটিয়ায় ৩.৫৭ একর জায়গা জুড়ে প্রায় ২২.০১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ৪০,০০০ লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন গোমতী ডেয়ারির দ্বিতীয় ইউনিট। শনিবার  কেন্দ্রীয় মৎসপালন, পশুপালন, ডেয়ারী ও পঞ্চায়েতি রাজ দপ্তরের  মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিং ওরফে লল্লন সিং ও দপ্তরের  প্রতিমন্ত্রী  এসপি সিং বাঘেলে'র হাতধরে এই ইউনিটটির উদ্বোধন হয়।  ইউনিটটির শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা বললেন
রাজ্যের প্রায় ১৭৮ টি সমবায় সমিতি ও ৫ হাজারেরও বেশি গো-পালক সমৃদ্ধ গোমতী ডেয়ারির এই নতুন ইউনিটটি আগামী দিনে রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতির নয়া দুয়ার উন্মোচিত করবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন,
দুগ্ধ উৎপাদনে রাজ্যের স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি করতে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো সুদৃঢ় করতে বামুটিয়ায় গড়ে তোলা হয়েছে গোমতী ডেয়ারীর দ্বিতীয় ইউনিট।প্রায় ৪০,০০০ লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন উত্তর পূর্বাঞ্চলের সর্ববৃহৎ ডেয়ারী হিসাবে এই ইউনিটটি পূর্ণ উদ্যমে চালু হলে গোটা উত্তর পূর্ব ভারতের মানুষ এতে উপকৃত হবেন। কর্মসংস্থানের সুযোগ বহু গুণে বৃদ্ধি পাবে।  এই নতুন ইউনিটটি রাজ্যের উন্নয়নের টুপিতে আরও একটি নতুন পালক যুক্ত করেছে। তবে এই বিশাল বড় ইউনিটটি চালু রাখার জন্য সবাইকে একটা টিম হয়ে কাজ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাণীসম্পদ এবং মৎস্য পালনে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। বিশেষ করে গ্রামীণ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। মানুষের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রাণীজ প্রোটিন উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আধুনিক ডেয়ারি গ্ল্যান্ট স্থাপনের ফলে যেমন রাজাবাসীর দুগ্ধজাতীয় পণ্যের বাড়তি চাহিদা পূরণ হবে তেমনি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।   ৩.৫৭ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই আধুনিক ডেয়ারি প্ল্যান্ট নির্মাণে কেন্দ্রীয় সরকারের ১৯ কোটি ৪৮ লক্ষ এবং রাজা সরকারের ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও  বলেন, রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করছে রাজ্য সরকার। আগামী ৫ বছরের মধ্যে রাজ্যকে দুধ, ডিম ও মাছ উৎপাদনে স্বয়ম্ভর করে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করা হচ্ছে।, গো-পালনে উৎসাহিত করতে মুখ্যমন্ত্রী উন্নত গোধন প্রকল্পে গোপালকদের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহারের পাশাপাশি সেক্স সর্টেড সিমেন প্রয়োগের ফলে স্ত্রী বাছুরের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রাণী সম্পদ বিকাশ যোজনায় গো-পালকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। গো-পালনের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে হাঁস ও মুরগি পালনেও সরকারী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রাণী পালকদের তাৎক্ষণিক সুবিধার্থে ভ্রাম্যমান মোবাইল ইউনিট এবং টোল ফ্রি নাম্বার ১৯৬২ চালু করা হয়েছে। এবারের  বাজেটেও প্রাণী পালকদের সহায়তার সংস্থান রাখা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে মহিলাদের আংশিদারিত্ব অনস্বীকার্য। এর গুরুত্ব অনুধাবন করেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহিলাদের স্বনির্ভরতার মাধ্যমে তাদের সশক্তিকরণে গুরুত্বআরোপ করেছেন। রাজ্যেও মহিলাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। টিআরএলএম এবং টিইউএলএমের মাধ্যমে মহিলাদের নিয়ে স্ব সহায়ক দল গঠন করা হচ্ছে। রাজ্যে বর্তমানে ৫ লক্ষ্যের বেশি মহিলা ও সহায়ক দলের সাথে যুক্ত হয়ে নিজেদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি রাজ্যের আর্থিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় মহিলাদের স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে রাজ্যে ৯১ হাজারের বেশি লাখপতি দিদি তৈরী করা হয়েছে। তাদের ব্যবসার প্রসারে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া সমবায়ের মাধ্যমে বিশেষ করে দুগ্ধ শিল্পে মহিলাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে দুধ, ডিম, মাছ এবং মাংস উৎপাদন, প্রাপ্যতা এবং চাহিদার তথ্যও তুলে ধরে আলোচনা করেন। এর উৎপাদন আরও বাড়ানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী ।তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রাণী সম্পদ বিকাশে তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর কাজ করার উপর বিশেষভাবে গুরুত্বআরোপ করেছেন। এক্ষেত্রে উন্নত গাভী পালন, তাদের সঠিক পরিচর্যা, রোগমুক্ত রাখতে সময় সময়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী। গো-পালকদের উৎসাহিত করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। দুধ যাতে নষ্ট না হয় তাই দুধ সংগ্রহ থেকে বিক্রি করা পর্যন্ত কোল্ড চেইন ব্যবস্থা রাখার কথা বলেন। এছাড়া বিপনন ব্যবস্থাকে উন্নত করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার কথায়,গ্রামীণ এলাকা থেকে দুধ সংগ্রহ এবং বিক্রয় ব্যবস্থার প্রসার হলে গো পালকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। এমনিতেই রাজ্যে গোমতী ডেয়ারির সুনাম রয়েছে। গোমতী কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রোডিউসার্স ইউনিয়ন লিমিটেড'র দৈনিক ৪০ হাজার লিটার ক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক ডেইরি প্ল্যান্ট এর কাজ শুরু হলে এখানে গুণগতমান সম্পন্ন বিভিন্ন ধরণের দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন হবে। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার পাশাপাশি সিপাহীজলা, গোমতী এবং দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার মানুষ উপকৃত হবেন।