
শনিবার দিল্লিস্থিত এইমস ডাইরেক্টর প্রফেসর এম শ্রীনিবাস সহ চারজনের প্রতিনিধি দল দুদিনের জন্য রাজ্য সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। সেখানে জিবি হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরিসেবা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। মুখ্যমন্ত্রীর সাথে প্রাথমিক সাক্ষাৎ শেষে। জিবিপি হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। পাশাপাশি জিবি হাসপাতালে চিকিৎসকদের সাথেও গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করেছেন। হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগ ঘুরে অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথেও আলোচনা করেছেন তারা। দিল্লি থেকে এইমসের আগত এই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব কিরন গিত্যে।
রাজ্যের প্রধান সরকারী রেফারেল হাসপাতাল জিবি’র চিকিৎসা পরিষেবার হালহকিকত খতিয়ে দেখতে দিল্লীস্থিত অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স তথা এইমসের অধিকর্তা ডক্টর এম শ্রীবাসের নেতৃত্বে চার সদস্যের বিখ্যাত চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল আগরতলায় এসেছেন। শনিবার ৭জুন দিল্লী থেকে উচ্চপর্যায়ের চিকিৎসক দলটি আগরতলায় পৌঁছেই মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহার সাথে সাক্ষাৎ করেন। পরে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা সহ জিবি হাসপাতালের পরিচালন কর্তৃপক্ষ সহকারে এইমসের পুরো টিমটি টিআইএফটি কনফারেন্স হলে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষ করে এইমস ডাইরেক্টর প্রফেসর এম শ্রীনিবাসের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি জিবি হাসপাতালে পরিদর্শনে যান। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব কিরন গিত্যে সহ-স্বাস্থ্য দপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকরা। স্বাস্থ্য দপ্তর ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহার আমন্ত্রণে এইমসের চিকিৎসক দলটি রাজ্যে এসেছেন মূলত জিবি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার হাল কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার জন্য।এর পাশাপাশি চিকিৎসা পরিকাঠামোকে আরও কীভাবে আপডেট ও আধুনিক করা যায় সেই বিষয়েও উপযুক্ত পরামর্শ দেবেন এইমসের অভিজ্ঞ প্রতিনিধিরা। জিবি পরিদর্শনের পর এইমসের অধিকর্তা সহ চিকিৎসক প্রতিনিধি দলটি বিভিন্ন বিষয়ে নতুন কিছু চিন্তা ভাবনা নিয়ে আবারো মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহার সঙ্গেও বৈঠক করবেন। বৈঠকে চিকিৎসক প্রতিনিধি দলটি জিবির চিকিৎসা পরিষেবার হালহকিকত সহ কোন কোন বিষয়গুলোতে আরো উন্নয়ন প্রয়োজন সে ব্যাপারে একটা রিপোর্ট তৈরি করে সেই রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে প্রদান করবেন এবং তাদের দেবী হাসপাতাল পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা দেবেন। জানা গেছে জিবি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবায় কোন কোন ব্যবস্থায় ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে,কীভাবে ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করতে হবে,উন্নত ও আধুনিক কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে সেই সব বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক প্রতিনিধি দলের চিকিৎসকরা তা সবিস্তাবে তুলে ধরবেন । তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শকে কাজে লাগিয়ে রাজ্য সরকার সেই অনুযায়ী রাজ্যের প্রধান সরকারী রেফারেল হাসপাতাল জিবির চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসা পরিষেবাকে আরও উন্নত ও আধুনিক করার প্রতি জোর দেবে। জিবির চিকিৎসা পরিষেবা ও চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ নিয়ে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে সেই বিষয়ে লিখিতভাবেও মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তাদের অভিমত ও পরামর্শ দিয়ে যাবেন বলেও জানা গেছে। স্বাস্থ্য সচিব কিরন গিত্যে জানিয়েছেন রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের সাথে এইমসের একটি মউ স্বাক্ষরিত হবে। এই মউ সাক্ষরের পর জিবি হাসপাতাল পরিচালন কর্তৃপক্ষ তথা স্বাস্থ্য দপ্তর এইমস প্রতিনিধিদের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী ছয় মাস থেকে এক বছর কাজ করবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ হলে আগামী দিনে ত্রিপুরার ৪০ লক্ষ মানুষ আরো উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবে বলে দৃঢ় অভিমত প্রকাশ করলেন কিরন গিত্যে।
প্রসঙ্গত, এইমস প্রতিনিধিদের এই ভিজিটের পরই দেখা যাবে রাজ্য সরকার জিবি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা ও চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নতি ও আধুনিকীকরণে এইমসের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিখ্যাত চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী পরামর্শ গুলো বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ নেয়। রাজ্য সফরে আগত এইমসের এইপ্রতিনিধি দলে এইমস হাসপাতালের প্রশাসনিক দক্ষ আধিকারিকও ছিলেন। তারা জিবির সঙ্গে যুক্ত মেডিক্যাল কলেজেরও খোঁজখবর নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর জিবি হাসপাতাল সহ রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা ও ব্যবস্থার উন্নতি করার জন্য চেষ্টা করছেন। মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা সবসময়ই চিকিৎসা পরিষেবা ও ব্যবস্থায় উন্নতি করার রাজ্য সরকারের চেষ্টার কথা সবসময়ই সভা-বৈঠকে-সেমিনারেও তুলে ধরছেন। কিন্তু তারপরও জিবি হাসপাতালে সাম্প্রতিককালে পর পর কয়েকজন রোগীর মৃত্যু নিয়ে শোকাহত ক্ষুব্ধ পরিবারের তরফে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার গাফিলতি ও অবহেলার দিকে আঙুল তুলে হাসপাতালে ক্ষোভ – বিক্ষোভ দেখান। চলতি সপ্তাহের সোমবার বিকালেও মেডিসিন বিভাগে রেখা দেবনাথ নামে মাঝ বয়সি এক মহিলা রোগীর মৃত্যু নিয়ে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয় শোকাহত পরিবারের তরফে। হাসপাতালের তরফে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগের তদন্তও করানো হয়। কিন্তু তদন্তে কী উঠে এলো এবং সেই বিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তর ও রাজ্য সরকার কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা সেই বিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তর নীরব।