
মোদি সরকারের আমলে ১৬ টি কৃষি পণ্যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের মধ্যে নয়টি ফসলের দামই পূর্বের তুলনায় অনেকটাই কমে গেছে। এককথায় দেশের কৃষকদের সাথে প্রতারণা করছে মোদী সরকার। বৃহস্পতিবার প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রবীর চক্রবর্তী।
কৃষকদের সাথে প্রতারণা করছে মোদি সরকার। দাবি করলেন কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রবীর চক্রবর্তী।
এদিন কংগ্রেস ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, স্বাধীন ভারতে কৃষি ও কৃষক কল্যাণে এযাবৎ যা কিছু উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তার অধিকাংশই জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়কালেই। বিশেষত দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে স্থায়ী রোজগার বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রাক্তন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের নেতৃত্বে ইউপিএ সরকারের যে সমস্ত পদক্ষেপ গুলির মধ্যে অন্যতম ডক্টর স্বামী নাথন কমিশন গঠন। আজ থেকে ১৯ বছর আগে তা গঠন করা হয়েছিল। কমিশনের যেই সুপারিশ গুলি ছিল তাতে কৃষি উৎপাদক সামগ্রীর মূল্য কৃষিতে ব্যবহৃত শ্রমের মূল্য কৃষি কাজে ঋণের সুদ জমির খরচ বা ভাড়া যুক্ত করে চাষের মূল খরচ ঠিক করা। তার উপর লাভ হিসাবে ৫০ শতাংশ যোগ করে ফসলের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারিত করার সুপারিশ করা হয়। এই স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ দেশে আইন হিসেবে কার্যকরী করার দাবিতে দেশব্যাপী বিজেপি বিরোধী সবকটি কৃষকের যুক্ত আন্দোলন যা গোটা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এতে ৭৫০ জন কৃষক নিহত হয়। পরবর্তীতে মোদি সরকার বাধ্য হয়েছিল দেশে প্রচলিত কৃষি আইনগুলি বাতিল করে নতুন কালো তিন কৃষি আইন লাগু করেছিল বিজেপি সরকার তা প্রত্যাহার করে নিতে। কৃষক সংগঠনগুলোর সাথে মোদি সরকার লিখিত চুক্তি করেছিল স্বামীনাথন কমিশনের রিপোর্ট কার্যকরী করা সহ কৃষি পণ্যের উপর থেকে জিএসটি তুলে নেওয়া সহ অন্যান্য দাবি গুলি মেনে নেওয়ার। পাঁচ বছর অতিক্রম হওয়ার পরও মোদি সরকার প্রতিশ্রুতি করেননি শুধু কার্যকরী করেননি ঘোর পথে আবারো কর্পোরেট স্বার্থে কৃষি আইন করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কৃষক কল্যাণে নানা প্রকল্প ঘোষণা সাথে সাথে কৃষকদের আয় দুই গুণ তিন গুণ বাড়ানোর কথা বলে কৃষকদের মাসে ৫০০ টাকা নগদ বরাদ্দের মধ্য দিয়ে মোদি তার তথাকথিত কৃষি কল্যাণ করে যাচ্ছে। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় সরকার খারিফ ফসলের জন্য দুই লক্ষ ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা ঘোষণা করে সারাদেশে মোদির গুন গান প্রচারে যেমন ঢাক পেটাচ্ছে তেমনি ত্রিপুরায়ও লক্ষ লক্ষ টাকা বিজ্ঞাপনে দিয়ে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী উল্লাসে মেতে উঠেছেন অথচ প্রকৃত অর্থে ফসলের উৎপাদন খরচের ধারে কাছেও নয় এই বরাদ্দ।
প্রবীর বাবু বলেন,সরকারি তথ্য বলছে গত বছর সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী ফসল কিনেননি ধান উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ও উৎপাদনের ২৩ শতাংশ, গম ৫৬ শতাংশ, যেমন সরষে ইত্যাদি উৎপাদনের ১০%। অথচ ২০০৪ থেকে ২০১৪ ইউপিএ সরকার কৃষি পণ্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে বৃদ্ধি হার ছিল ১. ১৭ শতাংশ। মোদি জমানায় এই বৃদ্ধির হার মাত্র ১৩.৫৩ শতাংশ। তিনি বলেন,মোদির শাসনকালে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে ১৬ টি কৃষি পণ্যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের মধ্যে নয়টি ফসলের দামই পূর্বের তুলনায় অনেকটাই কমে গেছে। বর্তমান সরকার খারিফ মরশুমে ধান ও গমের মূল্য কুইন্টাল প্রতি ৬৯ টাকা বাড়িয়ে ২৩৬৫ টাকা করেছে স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ মানলে এর দাম হয় ৩১৩৫ টাকা মানে প্রতি কুইন্টালে ক্ষতি ৭৬০ টাকা, একই ভাবে জোয়ারের ক্ষেত্রে ১১১১ টাকা, ভুট্টায় ৫২৮ টাকা তিলে ৩১০২ টাকা, তুলায় ২৩৬৫ টাকা সয়াবিনে ১ হাজার ৬২৯ টা।প্রতি কুইন্টালে ক্ষতি হচ্ছে। কার্যত মোদি সরকার এতে কর্পোরেটদের প্রতি আবারো দয়া দেখিয়ে কৃষকদের সাথে প্রতারণা করেছে।
তার কথায়, ইউপিএ সরকার ১০ বছরের শাসন কালে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকার মতো যেই ঋণ মুকুব করেছিল তার তার ৮০ শতাংশই ছিল কৃষি ক্ষেত্র এবং কুটির শিল্পে। অথচ মোদি জমানায় ২৬ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মুকুব করা সত্ত্বেও কৃষি ঋণ মুকুব করছে না। কৃষি ঋণ মুক্ত না হতে পেরে একজন গড়ে প্রতিদিন ৩১ জন কৃষক প্রপ্তিদিন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। এই অবস্থায় দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা এমনকি মোদি প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টারও পরামর্শ ছিল দেশের আর্থিক ব্যবস্থার উন্নতি জিডিপি বৃদ্ধি ও সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষিজীবী ও শ্রমজীবীদের স্থায়ী রোজগার বাড়ানো ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনা তার কোনটাই মোদি সরকার মেনে নিচ্ছে না বলে প্রবীর বাবুর দাবি।